Studypress News

জাহাজ ভাঙায় বাংলাদেশ শীর্ষে

12 Nov 2019

জাহাজ নির্মাণ ও মালিকানায় বিশ্বসেরার তালিকায় বাংলাদেশ নেই। তবে জাহাজ ভাঙায় বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বিশ্বে যত জাহাজ ভাঙা হয়েছে, তার ৪৭ দশমিক ২ শতাংশই বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছে।২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল প্রায় এক কোটি ৮৯ লাখ টন। এর ৪৭ শতাংশই ভাঙা হয়েছে চট্টগ্রামের ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোয়। এতে টানা চতুর্থবারের মতো জাহাজ ভাঙায় শীর্ষস্থান ধরে রাখল বাংলাদেশ।

জাহাজ ভাঙায় বাংলাদেশের পরের অবস্থান ভারতের। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৮৬ লাখ টন আয়তনের জাহাজ ভেঙেছে। ভারতে ভাঙা হয়েছে ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টন আয়তনের জাহাজ। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে পাকিস্তান, তুরস্ক ও চীনের। ২০১৭ সালে জাহাজ ভাঙায় শীর্ষস্থানে ছিল ভারত। জাহাজ ভাঙা শিল্পে আশির দশকে নেতৃত্বে ছিল তাইওয়ান। নব্বইয়ের দশকে তাইওয়ানের সঙ্গে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া এই খাতে নেতৃত্ব দেয়। এরপরের দুই দশকে ভারত ও চীন ছিল জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে। গত এক দশক ধরে এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও মাঝে মাঝে শীর্ষস্থানে উঠে আসে। এবার এই খাতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে সব দেশকে।

জাহাজ ভাঙায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানে উঠে আসার কারণ হলো, ইস্পাতের কাঁচামাল জোগানে নির্ভরতা। ভারতের ইস্পাত তৈরির জন্য মৌলিক কাঁচামাল আকরিক লৌহ আছে। সেখানে পুরোনো জাহাজ ভাঙার জন্য কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা কম। জাহাজ ভাঙা–সংক্রান্ত নিয়মকানুনে বাধ্যবাধকতা বাড়ছে। পরিবেশদূষণ কমাতে চীন নিজ দেশের বাইরে থেকে পুরোনো জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখন জাহাজ ভাঙার বড় বাজার হয়ে উঠছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ১৯৬টি জাহাজ ভাঙার জন্য আমদানি হয়। এসব জাহাজ থেকে পাওয়া গেছে ২৫ লাখ ৮১ হাজার টন লোহা। এ জন্য ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা গুনতে হয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও চলছে বড় বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণকাজ। পাশাপাশি আবাসন খাতেও মন্দা কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দেশে রডের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পেও লোহার ব্যবহার বাড়ছে। এ চাহিদা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রাখছে জাহাজ ভাঙা। ফলে এ শিল্পে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে থাকলেও জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে।চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান জাহাজ নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর এই তিনটি দেশ বিশ্বের ৯০ শতাংশ জাহাজ নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশ করেছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আবার জাহাজের মালিকানায় শীর্ষ দেশ হলো গ্রিস।

যদিও সমুদ্রসৈকতে গড়ে তোলা ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙায় পরিবেশদূষণের ঝুঁকি অনেক বেশি। কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন ইয়ার্ডে এ শিল্পের শ্রমিকমৃত্যুর হারও কম নয়। এছাড়া জাহাজ ভাঙার সময় নির্গত গ্যাসে শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায়ও আক্রান্ত হচ্ছে। তাই জাহাজ ভাঙা নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশে আন্দোলন করে আসছে। এছাড়া নিম্নমানের ইয়ার্ডে জাহাজ বিক্রি বন্ধে ইইউ ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নানা ধরনের চাপ রয়েছে। তবে এগুলোর কোনোটিই এ দেশের জাহাজ ভাঙায় প্রভাব ফেলতে পারেনি।