Studypress News
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার: রসায়নে নতুন দিগন্তের সূচনা
16 Oct 2024
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কারটি রসায়নে তিন বিশিষ্ট গবেষককে দেওয়া হয়েছে। এই পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন এম. জামপার। তাদের কাজ মূলত প্রোটিনের ডিজাইন এবং স্ট্রাকচার প্রেডিকশনের ক্ষেত্রে বিপ্লবী উন্নতির জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে।
ডেভিড বেকার
ডেভিড বেকার, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের একজন গবেষক, "কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন" এ তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। বেকার এবং তার দল নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যা নতুন ঔষধের উন্নয়নে সাহায্য করবে। প্রোটিন ডিজাইন করতে প্রয়োগ করা কম্পিউটেশনাল পদ্ধতিগুলি, মেডিসিনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
ডেভিড বেকার এবং তার গবেষণা দল ইতিমধ্যে বিভিন্ন নতুন প্রোটিন ডিজাইন করেছে, যা বিরল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ডিজাইনগুলি শুধুমাত্র রোগের চিকিৎসা নয়, বরং তাদের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা উন্নত করতে সহায়ক। বেকারের কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে কিভাবে কেমিস্ট্রি এবং কম্পিউটেশনাল মডেলিং একত্রে কাজ করে, যার ফলে মানবস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন আসতে পারে।
ডেমিস হাসাবিস ও জন এম. জামপার
অন্যদিকে, ডেমিস হাসাবিস এবং জন এম. জামপার, গুগল ডিপমাইন্ডের গবেষকরা, "প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন" এ তাদের কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। তারা একটি AI মডেল, আলফা-ফোল্ড ২ তৈরি করেছেন, যা প্রোটিনের জটিল গঠনগুলি পূর্বাভাস করতে সক্ষম। এই আবিষ্কারটি গত দশকের অন্যতম বড় সমস্যা সমাধান করেছে এবং এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আলফা-ফোল্ড ২ প্রোটিন ফোল্ডিং সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান প্রদান করেছে, যা বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষকরা দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রোটিনের কাঠামো অনুমান করতে সক্ষম হচ্ছেন, যা চিকিৎসা গবেষণায় অনেক কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। এই প্রযুক্তি নতুন ঔষধের আবিষ্কার এবং উন্নত চিকিৎসার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
গবেষণার প্রভাব
এই তিন গবেষকের কাজের সম্ভাবনা অত্যন্ত ব্যাপক এবং এর ফলে আমরা স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উন্নতি দেখতে পাবো। নোবেল কমিটি এই গবেষণার প্রশংসা করে বলেছে, এটি কেমিস্ট্রির ক্ষেত্রে সত্যিই উদ্ভাবন এবং বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য এক নতুন পথপ্রদর্শক।
গবেষকরা বলছেন, প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন প্রযুক্তি ব্যবহারে নতুন ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করতে এবং অ্যান্টিবডি ড্রাগ ডিজাইন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ করে ক্যান্সার এবং অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্মরণীয় মুহূর্ত, যা প্রমাণ করে যে রসায়ন শুধুমাত্র একটি বিজ্ঞান নয়, বরং এটি মানবতার উন্নতির জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আসুন, আমরা এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের কাজের মাধ্যমে নতুন নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাই।
পূর্ববর্তী নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তরা: রসায়নের সেরা গবেষকরা
রসায়নে নোবেল পুরস্কার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যেখানে অনেক গবেষক তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা দেওয়া হলো:
১৯১১: মেরি কুরি - রেডিয়াম এবং পোলোনিয়ামের আবিষ্কার; রেডিয়ামের বিচ্ছিন্নকরণ
১৯১২: ভিক্টর গ্রিগনার্ড - গ্রিগনার্ড রিএজেন্টগুলির আবিষ্কার
১৯১২: পল সাবাতিয়ে - জৈব যৌগগুলির হাইড্রোজেনেটিং পদ্ধতি
১৯১৩: আলফ্রেড ভার্নার - অণুর মধ্যে পরমাণুর সংযোগের উপর কাজ
এই গবেষকদের কাজ রসায়ন বিজ্ঞানে বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছে এবং আজকের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাদের অবদান আজকের আধুনিক রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানকে প্রভাবিত করেছে, এবং ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।