Studypress News
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন হপফিল্ড ও হিন্টন
08 Oct 2024

২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞান নোবেল পুরস্কার জিতেছেন জিওফ্রি হপফিল্ড এবং ডেভিড হিন্টন, যাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) এবং মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁদের গবেষণা প্রযুক্তি ও সমাজের বিভিন্ন খাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা মানব জীবনের মান উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
জিওফ্রি হপফিল্ড: হপফিল্ড নেটওয়ার্কের আবিষ্কারকারী হিসেবে পরিচিত, জিওফ্রি হপফিল্ড কম্পিউটার সায়েন্সে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। হপফিল্ড নেটওয়ার্ক একটি প্রকারের রিকারেন্ট নিউরাল নেটওয়ার্ক যা সমান্তরালভাবে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম। তাঁর কাজ কেবল একাডেমিক গবেষণার জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি শিল্প ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিশেষ করে, হপফিল্ডের কাজ ফেস রিকগনিশন, প্যাটার্ন রিকগনিশন, এবং অটোপ্রোসেসিং-এর মতো প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনি নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্মৃতি গঠন এবং পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে নতুন ধারণা প্রবর্তন করেছেন। এই প্রযুক্তি আজকাল কম্পিউটার ভিশন এবং স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য, যেখানে ছবি এবং তথ্যকে দ্রুত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। হপফিল্ডের গবেষণার ফলে বোঝা যায় কিভাবে নিউরাল নেটওয়ার্কগুলি মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নকল করে, যা মানব মস্তিষ্কের মধ্যে ঘটিত তথ্য সংরক্ষণ এবং স্মৃতির জন্য একটি শক্তিশালী মডেল।
ডেভিড হিন্টন: ডেভিড হিন্টনকে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পিতা' বলা হয়। তাঁর কাজ গভীর শেখা (ডিপ লার্নিং) ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। ২০০৬ সালে তিনি ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্কের ব্যবহার সম্পর্কে গবেষণা প্রকাশ করেন, যা পরবর্তীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত উন্নয়নে সহায়ক হয়। তাঁর ডিজাইন করা মডেলগুলি স্বয়ংক্রিয় ভাষা অনুবাদ, স্বর চিনতে, এবং প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের মতো কাজগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
হিন্টনের গবেষণা বাস্তবিকভাবে কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করে, সেই সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করেছে। তিনি গুগলের গবেষণা দলের একজন সদস্য ছিলেন এবং সেখানে কাজ করার সময় তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে নেতৃত্ব দেন, যা AI প্রযুক্তির উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাঁর অবদান যেমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে কনটেন্ট মডারেশন এবং আটোমেটেড ফটো অ্যালবাম তৈরিতে সহায়ক হয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকেও আধুনিক করেছে।
নোবেল পুরস্কারের গুরুত্ব: নোবেল কমিটি হপফিল্ড ও হিন্টনের গবেষণার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং উল্লেখ করেছে যে তাঁদের কাজটি মানুষের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই পুরস্কার কেবল তাঁদের কাজের স্বীকৃতি নয়, বরং প্রযুক্তির প্রভাব এবং এর সামাজিক পরিবর্তনের প্রতি একটি আলোকপাত।
বর্তমানে, AI প্রযুক্তি সমাজের বিভিন্ন খাতে গভীর প্রভাব ফেলছে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, এবং শিক্ষা। হপফিল্ড এবং হিন্টনের কাজের ফলে এই প্রযুক্তিগুলির ব্যাপক ব্যবহারকে আরও উৎসাহিত করবে এবং নতুন উদ্ভাবনকে প্রসারিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলি AI প্রযুক্তির প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নতির আশা দেখাচ্ছে। এই পদার্থবিজ্ঞান নোবেল পুরস্কার, যা প্রায়ই বিজ্ঞানের স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হয়, তা কেবল প্রযুক্তির জন্য নয় বরং মানব জাতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এই পুরস্কার ঘোষণার পর, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিবিদ এবং গবেষকরা হপফিল্ড এবং হিন্টনের কাজের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন। তাঁদের গবেষণা আগামী দিনে আমাদের সমাজের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে, এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন দিশা দেখাবে। মানবতা এবং প্রযুক্তির মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করতে, এই পুরস্কার একটি উদ্বোধনী ধাপ হিসেবে কাজ করবে।
পূর্ববর্তী নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তরা: পদার্থবিজ্ঞানের সেরা গবেষকরা
পদার্থবিজ্ঞানেও নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের একটি উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গবেষকদের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
১৯২১: আলবার্ট আইনস্টাইন - ফটোরেজ এবং থিওরি অফ রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ করার জন্য পুরস্কৃত।
১৯২২: নিলস বোহর - পরমাণুর গঠন এবং তার ক্রিয়াকলাপের উপর গবেষণার জন্য।
১৯২৩: রবার্ট অ্যান্ড্রুজ মিলিকান - ইলেকট্রনের চার্জ এবং ফটোটেকনিকের ক্ষেত্রে তার কাজের জন্য।
১৯২৪: কার্ল মান্নে জর্জ সিগবাহন - এক্স-রে spectroscopy-এর ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য।
প্রতিটি পুরস্কারপ্রাপ্তের কাজ পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিককে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি সাধন করেছে।
Important News

Highlight of the week
