Studypress News

কী আছে সড়ক পরিবহন আইনে

03 Nov 2019

সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮। গত ২২শে অক্টোবরের আইনটি ১লা নভেম্বর থেকে কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করেছে সরকার। নতুন এই আইনে সব ধরনের সাজা বাড়ানো হয়েছে। আইনের ৬ ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, ঠিকানা পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। চালকদের লাইসেন্স পেতে অষ্টম শ্রেণি, সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স অন্যূন ১৮ বছর ও পেশাদারদের ক্ষেত্রে ২১ বছর হতে হবে। এছাড়া, শারীরিক- মানসিকভাবে সক্ষম ও মোটরযান চালনার যোগ্যতা যাচাই পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল কেউ লাইসেন্স পাবেন। অন্যথায় লাইসেন্স পাবেন না।


বিদেশী নাগরিকগণ তার নিজ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন ও পৃষ্ঠাঙ্কন করে লাইসেন্সের মেয়াদকালে সমগ্র বাংলাদেশে ওই লাইসেন্স দিয়ে চলাচল করতে পারবেন। তবে যে কোনো বিদেশী নাগরিক ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নির্দেশ প্রদান সাপেক্ষে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে পারবেন এবং আবেদন করা হলে তাকে এই আইনের অধীনে লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিক আইনের কোনো বিধান বা লাইসেন্স প্রদান করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল কিংবা অকার্যকর করতে পারবে না। এরূপ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কোনো মোটরযান চালাতে পারিবে ন।া শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিপরীতে ১২.১৫ পয়েন্ট থাকবে।

১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে, ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিল করা হলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে মটর চালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে না। এছাড়া, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী লিখিত চুক্তি সম্পাদন ও  নিয়োগপত্র প্রদান ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাউকে গণপরিবহনের চালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত কোন পরিবহনের চালক তার নিয়োগপত্র ও মোটরযান সংক্রান্ত অন্যান্য কাগজপত্র গণপরিবহনে সংরক্ষণ করবেন।

এই আইনের ১৬ ধারায় মোটরযান রেজিষ্ট্রেশন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা মোটরযান মালিক রেজিস্ট্রেশন সনদ ব্যতীত সড়ক-মহাসড়ক বা পাবলিক প্লেসে চলাচল করিতে পারিবেন না। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যবহৃত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট বাহিনী সম্পন্ন করিবে এবং উক্ত রেজিস্ট্রেশন সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।

এই আইনের ২৪ ধারায় রেজিস্ট্রেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করিলে বা আইনের পরিপন্থি কোন কার্য সম্পাদন করলে কর্তৃপক্ষ শুনানি গ্রহণ ও কারণ লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে। রেজিস্ট্রেশন স্থগিত বা বাতিল করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করিতে পারিবে। সরকার নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করিবে।

এই আইনের ২৫ ধারায় মোটরযানের ফিটনেস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মোটরযানের-ফিটনেস সনদ ব্যতীত, ফিটনেস অনুপযোগী, ঝুকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত, রংচটা, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যাতীত নির্ধারিত রং পরিবর্তন করে জরাজীর্ন, বিবর্ণ বা পরিবেশ দূষণকারী কোনো মটরযান চালনার অনুমতি প্রদান করা যাবে না। ফিটনেস প্রদান করলে, সনদ প্রদানকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

এই আইনের ২৮ ধারায় রোড পারমিট ব্যাতীত কোনো পরিবহন চলতে পারবে না। তবে ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা মৌসুমী ব্যবসা উপলক্ষে নির্ধারিত রুটের বাহিরে বিধি দ্বারা নির্ধারিত সময় ও শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ বা পরিবহন কমিটি সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী পরিবহন চলাচলের অনুমতি প্রদান করিতে পারিবে।

এই আইনের ৩০ ধারায় ১১ ধরণের যানবাহনকে রুট পারমিট হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- সরকার বা সরকারের পক্ষে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মালিকানাধীন পরিবহন, সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত সরকারি কাজে ব্যবহৃত যেকোনো পরিবহন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মালিকানাধীন চুক্তিবদ্ধ নাগরিক সেবা প্রদানের পরিবহন। শৃঙ্খলা বাহিনীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ব্যবহৃত পরিবহনযান। মৃতদহে পরিবহন ও সৎকারে নিয়োজিত পরিবহনযান। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মোটরযান প্রস্তুত বা  নির্মাণ করেন অথবা চ্যাসিসে যুক্ত করিবার জন্য বডি নির্মাণ করেন। সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবহনযান। সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত মোটরযান প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পরিবহনযান। ভ্রাম্যমাণ  পাঠাগার, ভ্রাম্যমান ওষুধালয়, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট এবং অনুরূপ কার্যে ব্যবহৃত ভ্রাম্যমান পরিবহনযান। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর  জন্য ভিন্ন পথে চালনা করা এইরূপ কোনো পরিবহনযান।

এই আইনের ৩৪ ধারায় গণপরিবহনের আসন সংখ্যা ও ভাড়া নির্ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ বা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি গণপরিবহনে নারী, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য আসন সংখ্যা নির্ধারণ করিতে পারিবে। কোনো গণপরিবহন সহজে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ব্যতীত যাত্রী পরিবহন করিতে পারিবে না। কোনো গণপরিবহনের মালিক, চালক, কন্ডাকটর, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করিতে পারিবে না। এই আইনের ৩৮ ধারা অনুযায়ী, সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবহনযানের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার কাম ক্লিনারের কর্মঘন্টা ও বিরতিকাল নির্ধারণ করিতে পারিবে।

ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গের জরিমানা: নতুন এই আইনে ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গের জরিমানা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার, হেলমেট না পরলে জরিমানা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সিটবেল্ট না বাঁধলে, মোবাইল ফোনে কথা বললে চালকের সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও তিন বছরের জেল হতে পারে।

ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন না করার দণ্ড: গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন না করলে বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি কিংবা আদায় করলে এক মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা। এছাড়া চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে। কনট্রাক্ট ক্যারিজের মিটার অবৈধভাবে পরিবর্তন বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় সংক্রান্ত ধারা ৩৫ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৩৫ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে। কন্ডাক্টর লাইসেন্স ছাড়া কোনো গণপরিবহণে কন্ডাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত ধারা ১৪ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৪ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় সংক্রান্ত ধারা ৩৪ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৩৪ এর উপ-ধারা (৩) ও (৪) এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরযান চালনার শাস্তি: মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটরযান চালনা সংক্রান্ত ধারা ১৬ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৬ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার ও প্রদর্শনে বিধি-নিষেধ সংক্রান্ত ধারা ১৭ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৭ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ দুই বছর তবে কমপক্ষে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা তবে কমপক্ষে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মোটরযানের মালিকানা পরিবর্তন বা হস্তান্তরের কারণে হস্তান্তর গ্রহীতার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ধারা ২১ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো হস্তান্তর গ্রহীতা ধারা ২১ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ফিটনেসবিহীন পরিবহন পরিচালনার শাস্তি : মোটরযানের ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে বা ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুকিপূর্ণ মোটরযান চালনা সংক্রান্ত ধারা ২৫ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ২৫ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ট্যাক্স-টোকেন ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্স-টোকেন ব্যবহার করে মোটরযান চালনা সংক্রান্ত ধারা ২৬ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ২৬ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

রুট পারমিটবিহীন পরিবহনের দণ্ড:  রুট পারমিট ছাড়া পাবলিক প্লেসে পরিবহন যান ব্যবহার সংক্রান্ত ধারা ২৮ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ২৮ এর উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিদেশি নাগরিকের বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিজ দেশের মোটরযান/গণপরিবহনের রুট পারমিট গ্রহণ না করা সংক্রান্ত ধারা ২৯ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো বিদেশি নাগরিক ধারা ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এজন্য তিনি সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মোটরযানের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড: মোটরযানের বাণিজ্যিক ব্যবহার সংক্রান্ত ধারা ৩১ এর বিধান লঙ্ঘনের দণ্ড- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৩১ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, এ জন্য তিনি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে।