Studypress Blog

জাতীয় চার নেতার জীবনবৃত্তান্ত

23 Aug 2018

 সৈয়দ নজরুল ইসলাম (১৯২৫-৭৫)

মুজিবনগরের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯২৫ সালেকিশোরগঞ্জ জেলার যমোদল দামপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালেএমএ (ইতিহাস) এবং ১৯৫৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতেসক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৬-৪৭ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীসময়ে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনকালে গঠিত সর্বদলীয় অ্যাকশনকমিটির সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানসেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কর বিভাগে অফিসার পদ লাভ করেন। ১৯৫১ সালেসরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে যোগদেন। পরে তিনি ময়মনসিংহে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে সমাসীন ছিলেন। ১৯৬৬ সাল থেকে ৬-দফাআন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে আইয়ুব সরকার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবসহবহুসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্কটময় সময়ে (১৯৬৬-৬৯) সৈয়দ নজরুল ইসলামআওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল‘ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি’ নামে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করে এবং এর অন্যতমপ্রধান নেতা হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে (জানুয়ারি-মার্চ, ১৯৬৯) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিরসনের লক্ষ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে সরকারের সাথে বিরোধীদলগুলোর গোলটেবিল বৈঠকে (২৬ ফেব্রুয়ারি, ১০-১৩ মার্চ, ১৯৬৯) তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি গণপরিষদেরসদস্য এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের উপনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনেতার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে (১৯মার্চ, ১৯৭১) সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সঙ্গী। ২৫ মার্চ (১৯৭১) শেখ মুজিবুররহমানের গ্রেফতারের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭১সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। নবগঠিত এই সরকারের রাষ্ট্রপতিশেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুররহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শিল্পমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে তিনি নিরলস কাজ করেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি আওয়ামী লীগপার্লামেন্টারি পার্টির উপনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-২৮ নির্বাচনীএলাকা থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়েরদায়িত্ব লাভ করেন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদে দলের উপনেতা নির্বাচিত হন। তিনিশিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলামউপরাষ্ট্রপতি হন। ওই বছর বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য কর্তৃক সপরিবারে বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। এরপর দেশে সামরিক আইন জারি করা হয় এবং খন্দকার মোশতাকআহমদ রাষ্ট্রপতি হয়ে পুরনো সহকর্মীদের কয়েকজনকে তার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু সৈয়দনজরুল ইসলামসহ চার নেতা (তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান)উক্ত মন্ত্রিসভায় যোগদানে অস্বীকৃতি জানালে ২৩ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন।১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ চার নেতাকেনির্মমভাবে হত্যা করে। তাকে বনানী গোরস্তানে সমাহিত করা হয়

 

তাজউদ্দীন আহমদ (১৯২৫-৭৫

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গাজীপুর জেলারকাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালে তার জন্ম গ্রহণ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৪ সালেম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৮ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে কারাবন্দি অবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি আইনশাস্ত্রেডিগ্রি লাভ করেন। রাজনীতিক ও আইনজীবী তাজউদ্দীন আহমদ পবিত্র কোরানে হাফেজ ছিলেন।ছাত্রজীবন থেকেই তাজউদ্দীন আহমদ সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত হন। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি মুসলিমলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পাকিস্তানআন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ সরকারের গণবিচ্ছিন্নরাজনীতির প্রতিবাদে তিনি এ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগগঠনের (১৯৪৯) অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগের (বর্তমানবাংলাদেশ ছাত্রলীগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণসদস্য হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনকালে গ্রেফতার হন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেন। তিনি পূর্বপাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের নির্বাহীপরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ওসমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে কাপাসিয়া থেকেপূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই তিনি ৯২-ক ধারায় গ্রেফতার হন।১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮সালে দেশে সামরিক শাসন জারির পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তাজউদ্দীন আহমদ গ্রেফতারহন এবং ১৯৫৯ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ন্যাশনালডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৬৪ সালেআওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই বছরেএপ্রিলে তিনি গ্রেফতার হন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (১৯৬৫) সম্মিলিত বিরোধী দলেরপ্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগেরসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬-দফা আন্দোলনের সময় দেশরক্ষা আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়।১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে তিনি দলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন। রাজনৈতিক বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যেবিরোধী দল ও সরকারের মধ্যে আলোচনার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক আহূতগোলটেবিল বৈঠকে (১৯৬৯) তিনি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তান সরকারসত্তরের নির্বাচনের গণরায়কে কার্যত অস্বীকার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায়শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং তাজউদ্দিন আহমদ এআন্দোলনের অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী গণহত্যা শুরুকরলে তিনি ঢাকা ত্যাগ করে ভারত গমন করেন। ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনিএই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। মুক্তিবাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বগ্রহণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে (১৯৭২)তাজউদ্দীন আহমদ প্রথমে অর্থ এবং পরে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। বাংলাদেশেরসংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি সংবিধান প্রণয়নে বিশিষ্ট ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালেতিনি ঢাকা-২২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদেরহাতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে এবং ২৩ আগস্টতাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় ৩ নভেম্বর অপর তিনজাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং মুনসুর আলীর সঙ্গে তাকেনির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠসহকর্মী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। অসাম্প্রদায়িকগণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী তাজউদ্দীন আহমদ গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতির স্বাধিকারপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৪২ সাল থেকে আজীবন বয়স্কাউটআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন।

মোহাম্মদ মনসুর আলী 

জন্ম : ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি। জন্মস্থান : সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দিইউনিয়নের ‘কুড়িপাড়া’। বাবা : হরফ আলী সরকার। পড়াশোনা : পড়াশোনা শুরু করেন কাজিপুরেরগান্ধাইল হাই স্কুলে। এরপর চলে আসেন সিরাজগঞ্জ বিএল হাই স্কুলে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হনএখান থেকেই। এরপর চলে যান পাবনা। ভর্তি হন এডওয়ার্ড কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এইকলেজ থেকেই। শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় জায়গির থেকে পড়াশোনা করেছেন মনসুর আলী। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ভর্তিহন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯৪৫ সালে এখান থেকেইঅর্থনীতিতে এমএ এবং ল’ পাস করেন। এলএলবিতে প্রথম শ্রেণী লাভ। ১৯৪৪ সালে তিনি গাইবান্ধারপলাশবাড়ির আমির উদ্দিন সরকারের সাত কন্যা ও পাঁচ পুত্র সন্তানের এক কন্যা আমেনা খাতুনকে বিয়েকরেন। তার শ্বশুর ছিলেন মুন্সেফ। তিনি চাইতেন জামাই চাকরি করুক। জজ হোক। কিন্তু তিনি চাকরিকরতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি স্বাধীন পেশা ওকালতিকেই পরবর্তী সময়ে নিজের পেশা হিসেবে বেছেনেন। ১৮৫১ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন পাবনা জেলা আদালতে। আইনজীবী হিসেবে তিনি ছিলেনএকজন সফল ব্যক্তি। পাবনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন তিনি। রাজনীতি :আলীগড় থেকে দেশে ফেরার পর তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সাথে। মুসলিম লীগের রাজনীতিতেপ্রবেশ করেন এই নবীন আত্মসচেতন ব্যক্তি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ছিলেন পাবনা জেলামুসলিম লীগের সহ-সভাপতি। ১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজিরক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর নামে পরিচিত হতে থাকেন। ১৯৫১সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে। আওয়ামী মুসলিমলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন এবং দলের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হনতিনি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদেরসদস্য নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে পাবনা-১ আসনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধেলড়াই করেন তিনি। এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন মনসুর আলী।আবদুল্লাহ আল মাহমুদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। এরপর যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে যায়। ১৯৫৬সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় পূর্ববঙ্গ কোয়ালিশন সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক, খাদ্য ও কৃষি এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন তিনি। ১৯৭০ সালের১৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন করেন। পাবনা-১ আসন থেকে পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেনতিনি। ১৯৭৩ সালের সাত মার্চের নির্বাচনে মনসুর আলী পুনরায় পাবনা-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদসদস্য নির্বাচিত হন। এ বছর তিনি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের(বাকশাল) সেক্রেটারি জেনারেলও ছিলেন এ সময় ক্যাপ্টেন মনসুর। মৃত্যু : ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরমধ্যরাতে অন্য চার জাতীয় নেতার সঙ্গে তাকে হত্যা করা হয়।

 

আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

 জন্ম : নাটোর মহকুমার বাগাতীপাড়া থানার মালঞ্চী রেলস্টেশনসংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে ১৯২৬ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন এএইচএম কামারুজ্জামান।পড়াশোনা : পড়াশোনার শুরু রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। বিশিষ্টসাংবাদিকসাহিত্যিক  সমাজসেবক আব্দুস সামাদ ছিলেন তার পড়াশোনার প্রেরণার উৎস। রাজশাহীকলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তার এক ফুপা। তিনি রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যাওয়ারসময় কামারুজ্জামান হেনাকেও সঙ্গে নিয়ে যান এবং চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেখানথেকেই ১৯৪২ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান

Govt Jobs

Bank Jobs

Viva Jobs