Studypress News

২৪ বছর পর ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ ভারত

03 Nov 2024

গত এক যুগ ধরে নিজেদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারের তিক্ত স্বাদ পায়নি ভারত। তবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই ইতিহাস গড়ে কিউইরা, এক যুগ পর স্বাগতিকদের টেস্ট সিরিজ হারের স্বাদ দিয়ে ভারতের মাটিত প্রথম সিরিজ জিতে নেয় ব্ল্যাকক্যাপসরা। এবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতে রোহিত শর্মার দলকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবালো সফরকারীরা।

হ্যান্সি ক্রনিয়ের দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২০০০ সালে সর্বশেষ ঘরের মাঠে টেস্টে ধবলধোলাই হয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারের ভারত। এরপর নিজের ঘরে হোয়াইটওয়াশ তো দূরের কথা, পরবর্তী দুই দশকেই কেবল একটি টেস্ট সিরিজ হারে। সেই হারের পর এক যুগ ও ১৮ সিরিজ অপরাজেয় ছিল রোহিত-কোহলিরা। সেই বৃত্ত তো ভেঙেছে–ই, ২৪ বছর হোয়াইটওয়াশ না হওয়ার কীর্তিও তছনছ করে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।


মুম্বাইয়ের ওয়ানখেড়ে স্টেডিয়ামে কিউইদের দেওয়া ১৪৭ রানের লক্ষ্যটা ছোট মনে হলেও, আদতে রোহিতের শহরটি নাটকীয় রোমাঞ্চ মঞ্চস্থ করতে প্রস্তুত ছিল। নিজেদের বানানো স্পিন ফাঁদে আটকে ভারতীয় ইনিংস থেমেছে ১২১ রানে। তিন ম্যাচের সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে  ২৫ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ১৪৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ১২১ রানে অলআউট করে দিয়েছে তারা। বেঙ্গালুরুতে প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে জয়ের পর কিউইরা পুনেতে ১১৩ রানে জিতেছিল।

এই সিরিজের আগে ভারতের মাটিতে মাত্র ২টি টেস্টে জয় ছিল নিউজিল্যান্ডের। এমন অতীত নিয়ে ভারতের মাটিতে তাদেরই হোয়াইটওয়াশ করাটা বিস্ময়করই। তাও দলের সেরা ব্যাটার কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়াই, ইনজুরির কারণে এ সিরিজে নেই সাবেক অধিনায়ক। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্রুত ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর রিশভ পন্ত ভারতকে লড়াইয়ে রাখেন। রবীন্দ্র জাদেজাকে অপর পাশে রেখে নিউজিল্যান্ডের হুমকি হয়ে দাঁড়ান তিনি। ‘ওয়ানম্যান আর্মি’ হয়ে ছাতুপেটা করছিলেন কিউই বোলারদের। তিনি আউট হতেই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড় করে শেষ হয়ে যায় ভারতের জয়ের স্বপ্ন।

নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৪ রানে অলআউট করে দিয়ে ১৪৭ লক্ষ্য পায় ভারত। রান তাড়া করতে নেমে টপাটপ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন ম্যাট হেনরি। এরপর ব্যাটন হাতে নেন অ্যাজাজ প্যাটেল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের স্পিন পিচের ষোলকলা সুবিধা নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনার শুভমান গিল ও বিরাট কোহলিকে সাজঘরে পাঠান। দুজনই ১ রান করে তুলেন। আগের ইনিংসে গিল ৯০ রান করলেও কোহলি আউট হয়েছিলেন মাত্র ৪ রানে। যশ্বসী জয়সওয়াল ততক্ষণ আশার বাতি হয়ে টিকে ছিলেন। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন গ্লেন ফিলিপস। অ্যাজাজ প্যাটেল নেন সরফরাজ খানের উইকেটও। যদিও এরপর হাল ধরেন রিশভ পন্ত। ৫ উইকেট পড়ার পর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে জুটি বাধেন তিনি। লাঞ্চ বিরতি শেষে আউট হন জাদেজা। ২২ বলে ৬ রান করে অ্যাজাজের বলে উইল ইয়ংকে ক্যাচ দেন তিনি। পন্ত তখনও সংগ্রামে অবিচল থাকেন।

প্যাটেলের অফস্টাম্পের বাইরে ফেলা একটি বল এগিয়ে খেলতে যান পন্ত। দ্রুত টার্ন নিয়েই বল ঢুকে যায় পায়ের দিকে। ব্যাট-প্যাডের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া বল তালুবন্দী করেন টম ব্লান্ডেল। রিভিউ নেবেন কি না, দোটানায় ছিলেন টম লাথাম। শেষ মুহূর্তে গিয়ে রিভিউ নেন তিনি। রিভিউয়ে দেখা যায় বল প্যাটে লাগার আগে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। ৫৭ বলে ৬৪ রান করেন তিনি। তখন জয়ের জন্য দরকার ছিল আর ৩৭ রান। এরপর আর ভারতকে পথ দেখাতে পারেননি ওয়াশিংটন, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, আকাশ দীপ ও মোহাম্মদ সিরাজ। অবিশ্বাস্য এই অর্জনে সবচেয়ে বড় অবদান এই ম্যাচের সেরা এজাজ প্যাটেল আর সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান উইল ইয়াং। মুম্বাই টেস্টে ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৬ উইকেট। এই টেস্টের আগে মুম্বাইয়ে খেলা সর্বশেষ টেস্টেও ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। এই সিরিজে উইকেট নিয়েছেন ১৫টি।


অস্ট্রেলিয়ার ‘লাস্ট ফ্রন্টিয়ার’ ভারত কী অবলীলায়ই না জয় করল নিউজিল্যান্ড! দেশটির সাবেক ক্রিকেটার এবং বর্তমানের ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল তো আর এমনি এমনিই বলেননি, ‘নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই সেরা সাফল্য।