Studypress News

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের উদ্বেগ প্রকাশ

15 May 2024

‣ করোনা-প্রতিরোধী অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণায় দেশে এই টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেক টিকা গ্রহীতা বলেছেন, টিকা নেয়ার পর সামান্য জ্বর, হাত ব্যথা হয়েছিল। ভবিষ্যতে শরীরের বড় কোনো ক্ষতির ঝুঁকি আছে কিনা তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত এই বিষয়ে গবেষণার তাগিদ দিয়েছেন। বাংলাদেশে গ্রহীতারা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছেন কিনা জানতে জরিপ চালানোর জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।


‣ দেশে করোনার টিকা বিতরণের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৯ই মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ২ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৭ জন। সব মিলে বিভিন্ন টিকা নিয়েছেন মোট ১৫ কোটি ৯ লাখ ২৫ হাজার ৫৯১ জন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে দেশের খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির (কোভিড-১৯) অন্যতম সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। তারাও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করছেন। টিকাটি তাড়াহুড়া করে দ্রুতই বাজারে আনা হয়েছিল। তবে যেকোনো জিনিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এর মাত্রা কতোটুকু তা বুঝতে হবে। তিনি বলেন, যারা এই টিকা নিয়েছেন আর যারা নেননি তাদের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য বের করতে হবে। ওই টিকা নেয়া ব্যক্তির উপসর্গ, ইতিহাস জানা জরুরি। যারা নিয়েছেন তাদের মধ্যে খারাপ কিছু পাওয়া গেলে তার বা তাদের বাঁচার কী উপায় তাও জানা দরকার বলে এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, টিকা নেয়ার পর ওই ব্যক্তির শরীরে ইমিউনাইজেশন হয়েছে কিনা দেখতে হবে। তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে কিনা তাও দেখতে হবে।  এ বিষয়ে দেশের জনস্বাস্থ্যবিদ ড. আবু জামিল ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, টিকার বিষয়ে আগেই গবেষণা করা দরকার ছিল। দেরি করে কেন? আগে থেকে দেখা উচিত ছিল। এখন গবেষণার কথা বলছে। এতে চলে যাবে ৬ মাস। ওই কোম্পানি তাদের টিকায় তো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে প্রত্যাহারই করেছে। এদিকে  রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা-প্রতিরোধী অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও গ্রহীতারা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছেন কিনা জানতে জরিপ চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এইটা (টিকা তুলে নেয়ার বিষয়) আমরা শুনেছি। তবে, আমাদের দেশে এরকম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট আমরা এখন পর্যন্ত পাই নাই।


‣ বাংলাদেশেও প্রচুর মানুষকে আ্যাস্ট্রাজেনিকার টিকা দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না জানবো আমাদের দেশে কতোটুকু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। তবে আমরা এটি নিয়ে কনসার্ন। ওরা বলছে টিকা তুলে নিতে কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণ না পাবো ততক্ষণ পর্যন্ত কীভাবে বলবো?  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই)-এর পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন এই ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন,  আমরা জরিপের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার কাছে এখনও অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে মন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তিনি শুনেছেন বলে উল্লেখ করেন। জরিপ কোন পদ্ধতিতে হবে জানতে চাইলে পরিচালক জানান, জরিপের বিষয়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে। 


‣ প্রসঙ্গত,  পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট পাওয়ার কারণে সারাবিশ্ব থেকে কোভিড-১৯ টিকা প্রত্যাহার করে নেয়া শুরু করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর কয়েকদিন আগে বৃটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল বিষয়ক এই কোম্পানি স্বীকার করে যে, এই টিকা বিরল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এই টিকা আবিষ্কার করে। পরে সেই টিকা উৎপাদন করে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এর নাম দেয়া হয় কোভিশিল্ড। প্রস্তুতকারকরা বলেছে, সারাবিশ্ব থেকে এই টিকা প্রত্যাহার করে নেয়া শুরু হয়েছে। এর কারণ, কোভিড-১৯ এর অত্যাধুনিক টিকার পর্যাপ্ততা আছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, আপডেট হওয়া টিকাগুলোর কারণে এই টিকা বাতিল করা হয়েছে। আপডেট হওয়া টিকাগুলো নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা আরও বলেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে মার্কেটিং অথরাইজেশন স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারা আরও জানায়, এই টিকা আর উৎপাদন করা হবে না এবং আর ব্যবহারও করা হবে না।