Studypress News

কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলন

12 Dec 2023

• সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে হাইলেভেল সেগমেন্টে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। এ সেশনে বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা ইউএনএফসিসিসির সদস্যভুক্ত দুশ’ দেশের প্রতিনিধি বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের কার্যক্রম তুলে ধরে চলমান সম্মেলন থেকে প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেন বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে। জলবায়ুর চরম ঝুঁকি থেকে বাঁচতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ সাতগুণ বেশি কমানোর তাগিদ দেন। এর পাশাপাশি তুলে ধরেন বাংলাদেশের পক্ষে ৪ দফা প্রস্তাব।


➊ প্রথমত, টিকে থাকার জন্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা অবশ্যই এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। এর জন্য অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা আবশ্যক। 


➋ দ্বিতীয়ত, প্যারিস চুক্তির আলোকে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণসহ বৈশ্বিক মূল্যায়ন করতে হবে।


➌ তৃতীয়ত, ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ ও দ্বীপ দেশগুলোর জন্য অভিযোজন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। 


➍ চতুর্থত, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুত একশ’ বিলিয়ন ডলার প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।




• আগামী ২০২৫ সাল থেকে অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য ‘নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফাইড গোল’ অবশ্যই বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি হতে হবে। এক্ষেত্রে অধিক বিপদাপন্ন দেশগুলোর চাহিদা বিবেচনায় নিতে হবে অবশ্যই।জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস যেহেতু বৈশ্বিক, সেহেতু এর সমাধান ও ব্যবস্থাপনাও বৈশ্বিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই সমস্যা মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ও উন্নত দেশের উদ্যোগকে সুসংহত করে কার্যকর নীতি, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি পরিচালনা করা যায়, তবেই কর্মপ্রচেষ্টা সফল হতে পারে। সবার জন্য বসবাসযোগ্য একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই। দুর্যোগসহিষ্ণু অবকাঠামো সংক্রান্ত পঞ্চম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছে।



• আইপিসিসি রিপোর্ট- ২০২২ পূর্বাভাস দিয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং শেষার্ধে জিডিপির ২ থেকে ৯ শতাংশ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে। সে অবস্থায় সবার জন্য একটি টেকসই ও প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাসহ বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি প্রয়োজন, জলবায়ু পরিবর্তিত বিরূপ পরিস্থিতির আঘাত মোকাবিলার জন্য চাপসহিষ্ণু শক্তিশালী ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য। সর্বোপরি প্রয়োজন এই সংকট মোকাবিলার জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি সুদৃঢ় অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা। 



• যেটি প্রণিধানযোগ্য তা হলো, এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনগুলোর কোনো প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারই পূরণ করা যায়নি কিংবা হয়নি, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর আন্তরিকতা ও আগ্রহের অভাবে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষ থেকে বরাবরই সম্মেলনে ন্যায্যতার জন্য দাবি তোলা হয় জোরালোভাবে। তবে তা আদায় করা দুঃসাধ্য। পৃথিবীর সুরক্ষাসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে না। আর সেটি যদি অনিবার্য হয়, তা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।