Studypress News

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

12 Nov 2023

১১ নভেম্বর শনিবার দুপুর ১টার দিকে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। আইকনিক স্টেশনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হলো কক্সবাজার।

কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন ও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন প্রকল্পের উদ্বোধনের পর স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পতাকা উড়িয়ে ও হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে এ রুটে ট্রেনের যাত্রা শুরু করেন।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। 

মেগা প্রকল্প হিসেবে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে টেন্ডার হলে দোহাজারি-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনসট্রাকশন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পায়। কার্যাদেশ দেওয়ার পর ২০১৮ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেই হিসেবে অনুমোদানের ১৩ বছর ৪ মাস ৪ দিন পর প্রকল্পটির উদ্বোধন হচ্ছে।  এই ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।


নতুন রেলপথের অর্থায়ন: 

• ২০১০ সালে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন। 

• ট্রান্স এশীয় রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হতে ব্রডগেজ রেলপথ করতে প্রকল্প সংশোধন করা হয় ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল। 

• জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।

• চট্টগ্রামে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০.৮৩১ কিলোমিটার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে গুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত আরও ২৮.৭৫২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। 

• এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ব্যয় দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

• চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়।

• ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল শেখ হাসিনা তার সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

রেলপথ নির্মাণ এবং উন্নয়ন:

• এ রেলপথ সিঙ্গেল লাইন ডুয়ালগেজ। মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনের ট্রেন চলতে পারবে।

• দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের আওতায় ৩৯টি বড় আকারের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। 

• দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

• বিভিন্ন শ্রেণির ১৪৪টি লেভেলক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে।

• হাতিসহ বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য আলাদা আন্ডারপাস করা হয়েছে। 

রেলস্টেশন:

• কক্সবাজারে তৈরি হয়েছে ঝিনুকের আদলে ছয়তলা আইকনিক দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা।

• দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ এবং রামু রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।

• এসব স্টেশনে রয়েছে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম।

রেল চলাচল:

• প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে দুই জোড়া এবং ঢাকা থেকে এক জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করবে। তিনটি ট্রেনই আন্তঃনগর। 

• ঢাকা থেকে যে ট্রেনটি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছাড়বে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। আর কক্সবাজারে পৌঁছাবে ৬টা ৩০ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে এই রুটে আরও ট্রেন বাড়বে।


ভাড়া :

এরই মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ভাড়া ধরেছে রেলওয়ে।

• ঢাকা থেকে কক্সবাজার দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ১২৫ টাকা (দ্বিতীয় শ্রেণী সাধারণ)

• দ্বিতীয় শ্রেণী ১৭০ টাকা (মেইল/এক্সপ্রেস)

• কমিউটার ট্রেনে ২১০ টাকা

• সুলভ ২৫০ টাকা

• শোভন ৪২০ টাকা

•শোভন চেয়ার শ্রেণীতে ৫০০, টাকা

• প্রথম/সিট শ্রেণী চেয়ার ৭৭১ টাকা এবং প্রথম বার্থ ১১৫০ টাকা

•এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ৯৬১ টাকা, এসি সিট ১১৫০ টাকা এবং এসি বার্থ শ্রেণীর ভাড়া রাখা হয়েছে ১৭২৫ টাকা।