Studypress News
সরকারিভাবে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাসমূহ
26 May 2021
যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে জোর করে যাত্রী বিমানকে অবতরণ করতে বাধ্য করার ঘটনায় বেলারুশের প্রতি রাগত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী রায়ানএয়ারের এই ফ্লাইটটিতে বেলারুশের একজন ভিন্নমতের সাংবাদিক ছিলেন। বিমানটিকে বোমা হামলার হুমকির কথা বলে গতিপথ বদলে মিনস্কের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য করে বেলারুশ।
কিন্তু এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে।
এরূপ প্রথম ঘটনা ১৯৫৬ সালের।
আলজেরিয়ার স্বাধীনতার নেতা বেল বেল্লাকে গ্রেপ্তার করছে ফরাসী সৈন্যরা, আলজিয়ার্স, ১৯৫৬সাল। রাবাত থেকে তিউনিস যাওয়ার পথে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে একটি যাত্রী বিমান জোর করে নামিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাঝ আকাশে ভিন্ন একটি দেশের যাত্রী বিমানের সাথে দস্যুর মত আচরণ প্রথম করেছিল ফ্রান্স ১৯৫৬ সালে।
আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের কজন নেতাকে আটক করতে ফ্রান্স যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে জোর করে একটি যাত্রী বিমানকে অবতরণ করিয়েছিল।
১৯৫৬ সালে ২২শে অক্টোবর আলজেরিয়ার স্বাধীনতাকামী এফএলএন-এর পাঁচজন নেতা - যাদের মধ্যে স্বাধীন আলজেরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট নেতা আহমেদ বেন বেল্লাও ছিলেন - আঞ্চলিক একটি সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি একটি যাত্রী বিমানে চড়ে মরক্কোর রাজধানী রাবাত থেকে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে যাচ্ছিলেন ।
ফরাসী গোয়েন্দা বিভাগ খবরটি জেনে গিয়েছিল। যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে মাঝ আকাশে মরক্কোর বিমানটিকে জোর করে আলজেরিয়ার একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে নামানো হয়।
যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে জোর করে একটি যাত্রী বিমানকে অবতরণ করার দ্বিতীয় বড় ঘটনাটির হোতা ছিল ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি গেরিলা নেতা জর্জ হাবাশ। তাকে ধরার জন্য ইসরায়েল ১৯৭৩ সালে একটি লেবানিজ যাত্রী বিমানকে জোর করে অবতরণ করিয়েছিল
১৯৭৩ সালের ১১ই অগাস্ট লেবাননের বইরুত বিমান বন্দর থেকে ইরাকি এয়ারলাইন্সের ভাড়া একটি লেবানিজ বিমান ৮১ জন যাত্রী নিয়ে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলের দুটো যুদ্ধ বিমান লেবাননের আকাশ সীমায় বিমানটিকে জোর করে ইসরায়েলি শহর হাইফার কাছে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করায়।
ইসরায়েল খোলাখুলি বলেছিল ফিলিস্তিনি গেরিলা নেতা জর্জ হাবাশকে ধরার জন্য তারা এটি করেছে।
তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ান বলেন, সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী পপুলার ফ্রন্ট ফর দি লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএফপি) নেতা জর্জ হাবাশকে ধরতে বইরুত থেকে বাগদাদ-গামী বিমানটিকে হাইফাতে নামানো হয়েছিল।
তবে জর্জ হাবাশকে ইসরায়েল পায়নি, কারণ ঐ বিমানে তার বাগদাদ যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি এবং তার ডেপুটি সালাহ সালাহ শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করেছিলেন যে খবর ইসরায়েলিরা তখনও পায়নি।
ইরাকি এয়ারওয়েজের মূল বিমানটি বৈরুতে পৌঁছুতে দেরি হওয়ায় লেবানিজ বিমানটি ভাড়া করা হয় - যে ঘটনায় মি হাবাশ হয়তো সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন।
বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের ফ্লাইট ‘অপহরণ‘
লেবানিজ বিমান জবরদস্তি করে অবতরণ করানোর ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের নিন্দা করলেও ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টকে বহনকারী একটি বিমান অন্য দেশে অবতরণে বাধ্য করা এবং তার ভেতর তল্লাশির অভিযোগ ওঠে।
অস্ট্রিয়ার বিমানবন্দরে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেসকে বহনকারী বিমান, ২০১৩ সাল। বলিভিয়া অভিযোগ করে এডওয়ার্ড স্নোডেনকে আটক করতে আমেরিকার নির্দেশে মস্কো থেকে ফেরার পথে বিমানটিকে অস্ট্রিয়ায় নামতে বাধ্য করা হয়েছিল হয়েছিল
২০১৩ সালের দোশরা জুলাই বলিভিয়ার সরকার জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করে যে তাদের প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেসকে ‘অপহরণ‘ করতে তাকে বহনকারী বিমানটিকে জোর করে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবতরণ করা হয়েছে। প্রচণ্ড হৈচৈ হয়েছিল প্রায় আট বছর আগের বিরল ঐ ঘটনা নিয়ে।
বারাক ওবামা তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রশাসনকেই এর জন্য দায়ী করে বলিভিয়া এবং তার প্রতিবেশীরা। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরছিলেন মস্কোতে জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারকদের এক সম্মেলন শেষ করে দেশে ফিরছিলেন।
আগের দিন পহেলা জুলাই (২০১৩ সাল) তিনি রুশ টিভি চ্যানেল আরটিতে একটি সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন শিয়ায় আশ্রয় নেয়া আমেরিকান সাংবাদিক এডওয়ার্ড স্নেডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে তার দেশ প্রস্তুত।
পরের দিন যখন প্রেসিডেন্ট মোরালেসের ডাসল্ট ফ্যালকন ৯০০ বিমান রাশিয়ার নুকোভা বিমানবন্দর থেকে উড়ে পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিকের ওপর দিয়ে উড়ে যখন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জরুরী অবতরণ করে তখন তা নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়।
বলিভিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয় যে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল এবং ইটালি তাদের আকাশ-সীমায় তাদের প্রেসিডেন্টের বিমানটিকে ঢুকতে দিতে অস্বীকার করায় বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন পাইলট।বিমানটির গতিপথ বার বার বদলাতে গিয়ে জ্বালানি তেলের স্বল্পতা তৈরি হয়। পরে বিমানটিকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার বিমানবন্দরে নামে।
বলিভিয়া পরে অভিযোগ করে, পরিকল্পনা করেই বিমানটিকে ভিয়েনায় নামতে বাধ্য করা হয়েছিল।
অস্ট্রিয়ার তৎকালীন ডেপুটি চ্যান্সেলর মাইকেল স্পিনডেলেগার তখন বলেছিলেন বলিভিয়ার বিমানটির ভেতরে ঢুকে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছিল। খুবই স্পষ্ট ছিল যে অস্ট্রিয়ার পুলিশ সেদিন মি স্নোনেডেনের খোঁজ করেছিল।
ফ্রান্স, স্পেন এবং ইটালি সেদিন তাৎক্ষণিক-ভাবে বলিভিয়ার বিমানটিকে তাদের আকাশ সীমায় ঢুকতে না দেয়ার কারণ হিসাবে ‘কারিগরি“ সমস্যার যুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু বলিভিয়া সবসময় বলেছে ওগুলো ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা