Studypress News
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে হলো লিডারস সামিট
24 Apr 2021
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এর আমন্ত্রণে জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন ‘লিডারস সামিট’ ৪০ জন বিশ্ব নেতা নিয়ে ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে। সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার করেছেন-
এক. ২০৩০ সালের মধ্যে আমেরিকা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ২০০৫ সালের তুলনায় অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।
দুই. আমেরিকা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে অর্থ-সাহায্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবে।
করা ছিলেন?
যে ৩৯ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
লিডারস সামিট শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার ক্ষেত্রে মূল প্রতিপাদ্য (থিম)-গুলো হলো:
- গুরুত্বপূর্ণ এই দশকে নির্গমন হ্রাস করতে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির (দেশগুলোকে) তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে চেষ্টা জোরদার করা।
- নেট-জিরো অর্জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে অর্থ সংগ্রহ করা।
- জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধাগুলো যাতে কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে তার উপর জোর দেয়াসহ নতুন ক্লিন অ্যানার্জি অর্থনীতিতে স্থানান্তরের মাধ্যমে সকল জনসমাজ ও শ্রমিকরা যাতে উপকৃত হয় তার নিশ্চয়তার উপর গুরুত্বারোপ করা।
- নির্গমন হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করতে পারার পাশাপাশি নতুন বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ তৈরি ও ভবিষ্যতের শিল্পগুলোকে গড়ে তুলবে এমন রূপান্তরকারী প্রযুক্তির উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করা ও ব্যবহার ত্বরান্বিত করা।
- সবুজ পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে উচ্চাকাঙ্খা ও সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এমন ব্যক্তি ও সংস্থার কর্মকান্ড তুলে ধরা।
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে জীবন ও জীবিকা সুরক্ষার লক্ষ্যে সামর্থ্য জোরদার করা, জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সৃষ্ট বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এর প্রভাব মোকাবেলা করা এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রকৃতি-নির্ভর সমাধানের মাধ্যমে নেট-জিরো লক্ষ্য অর্জনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা।
লিডারস সামিট এ বাংলদেশের প্রধানমন্ত্রী
কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে এক উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অবিলম্বে একটি উচ্চাভিলাষী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা ভার্চ্যুয়াল জলবায়ু সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়েছেন। ‘লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট’ শীর্ষক দুই দিনের সম্মেলনটি আজ শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিচ্ছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা।
জলবায়ু ইস্যুগুলো সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায় বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের শিখিয়ে গেল যে শুধু শক্তিশালী সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভালনারেবল টোয়েন্টির (ভি২০) সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা। তিনি বলেন, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস বাংলাদেশে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসইভাবে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি প্রচার করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর এ ব্যাপারে ‘সিওপির দায়িত্বশীল সদস্যরাষ্ট্র ও সিভিএফের চেয়ার হিসেবে আরও কিছু পরামর্শ দিতে চাই।’ পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০: ৫০ ভারসাম্য বজায় রাখবে। এই তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর ক্ষয়ক্ষতি পূরণে বিশেষ দৃষ্টি দেবে। প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় পরামর্শ হচ্ছে, প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে।
সর্বশেষ পরামর্শে শেখ হাসিনা বলেন, সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন প্রশমন প্রযুক্তিগুলোর ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময় করতে হবে।