Studypress News

ব্রেক্সিট কার্যকর হয়েছে ,আসছে নতুন পরিবর্তন

10 Feb 2020

'ব্রিটেন এক্সিট' নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে- যা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া স্বরূপ।ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ একে অন্যের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারে এবং সেখানে বসবাস বা কাজ করতে পারে।৪০ বছরের বেশি সময় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের জুনে একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যেখানে ভোটাররা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন।

 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে এসেছে ব্রিটেন। ঘোষণা অনুযায়ী ৩১শে জানুয়ারি শুক্রবার রাত এগারটায় এ বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা।তবে আগামী এগার মাস পরিবর্তনকালীণ সময় বা ট্রানজিশনাল পিরিয়ড হিসেবে বিবেচিত হবে।আর এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য ইইউ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং ইইউকে অর্থ প্রদান করবে।

 

এই বিচ্ছেদের কারণে যেসব পরিবর্তন আসবে:

১.ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারাবেন যুক্তরাজ্যের এমপিরা

নাইজেল ফারাজ এবং অ্যান উইড্ডেকমবের মতো পরিচিত মুখগুলোসহ যুক্তরাজ্য থেকে ৭৩ জন সদস্য ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে।ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার ফলে তারা তাদের সদস্যপদ হারাবেন।কারণ যুক্তরাজ্য একই সাথে ইইউ'র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোও ছেড়ে যাচ্ছে।তবে যেহেতু যুক্তরাজ্য অন্তর্বর্তী সময়ে ইইউ'র আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে সেহেতু ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস আইনি সমস্যাগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেয়া অব্যাহত রাখবে।

২.ইইউ সামিটে আর নয়

ভবিষ্যতে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল সামিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অংশ নিতে চান তাহলে তার জন্য দরকার হবে বিশেষ আমন্ত্রণ।ব্রিটিশ মন্ত্রীরাও এখন থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মিত বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে পারবেন না।

৩.বাণিজ্য বিষয়ে অনেক কিছু শোনা যাবে

যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি বা এসব কেনার জন্য নতুন নিয়ম ঠিক করতে বিশ্বের যে কোনো দেশের সাথে আলোচনা শুরু করতে পারবে।

ব্রেক্সিট সমর্থকরা বলছেন নিজের বাণিজ্য নীতি ঠিক করার স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

৪.যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টের রং পরিবর্তন হবে

নীল রংয়ের পাসপোর্ট আবার ফিরে আসবে ত্রিশ বছর পর।২০১৭ সালে এ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা দিয়ে তখন অভিবাসনমন্ত্রী ব্রান্ডন লুইস দেশটির ঐতিহ্যবাহী নীল ও সোনালী ডিজাইনের পাসপোর্ট আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন।এ পাসপোর্ট প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিলো ১৯২১সালে।তবে বর্তমান যে পাসপোর্ট আছে সেটিও বৈধ থাকবে।

৫.ব্রেক্সিট কয়েন

প্রায় ত্রিশ লাখ বিশেষ কয়েন আসবে যেখানে ৩১শে জানুয়ারি এবং লেখা থাকবে 'পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল নেশনস'।তবে এ কয়েনকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে তারা এ কয়েন বর্জন করবে।

তবে সরকার একই ধরণের আরেকটি কয়েন আনার পরিকল্পনা করছে যেখানে উল্লেখ থাকবে ৩১শে অক্টোবর, যে তারিখে প্রকৃতপক্ষে ব্রেক্সিট কার্যকরের কথা ছিলো।

৬.বন্ধ হবে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট ডিপার্টমেন্ট

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাজ্যের যে বিভাগ আলোচনা চালিয়েছিলো সেই বিভাগটি বন্ধ হয়ে যাবে।সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে'র সময়ে ওই বিভাগটি চালু করা হয়েছিলো ২০১৬ সালে।সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাজ্যের নেগোসিয়েশন টিম হবে ডাউনিং স্ট্রীট অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ভিত্তিক।

৭.জার্মানি কাউকে যুক্তরাজ্যে প্রত্যর্পণ করবে না

সন্দেহভাজন অপরাধী যদি কেউ যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেয় তাহলে তাকে ফেরত পাবে না যুক্তরাজ্য।কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগরিককে প্রত্যর্পণের সুযোগ নেই, জার্মান সংবিধান অনুযায়ী।যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বলছে ইউরোপিয়ান অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে অন্তর্বর্তী সময় পর্যন্ত।

 

আর যেসব বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসবেনা

১. ভ্রমণ

অন্তর্বর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ভ্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের লাইনেই দাড়াতে পারবেন।

২. ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেট পাসপোর্ট

এগুলোর বৈধতা অব্যাহত থাকবে।

৩. ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য বীমা কার্ড

এ কার্ড দিয়েই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে।

৪. ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাস ও কাজ

অন্তর্বর্তী সময়ে চলাচলের স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে। তাই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ইইউভুক্ত দেশে বসবাস ও কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।ইইউভুক্ত অন্য দেশের নাগরিকরাও একই সুবিধা পাবে যুক্তরাজ্যে।

৫. পেনশন

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশে বসবাসরত যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের পেনশন সুবিধা পাবেন।

৬.বাজেটে অবদান

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে অন্তর্বর্তী সময়েও অবদান রেখে যাবে যুক্তরাজ্য।

৭. বাণিজ্য

যুক্তরাজ্যের সাথে ইইউ'র বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে নতুন কোন চার্জ আরোপ ছাড়াই।