Studypress News
হংকং বিক্ষোভ: প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার
05 Sep 2019

প্রায় তিন মাসব্যাপী বিক্ষোভের পর চীনে আসামি প্রত্যর্পণ বিষয়ক বিতর্কিত একটি বিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে হংকং সরকার। হংকংয়ের বিগত কয়েক দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট চলছে এই বিলটি ঘিরে। বিলটির বিরুদ্ধে টানা তিন মাস ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে লাখ লাখ নাগরিক। সম্প্রতি বিক্ষোভটি সহিংস মোড় নেয়া শুরু করেছে। এমতাবস্থায় টেলিভিশনে সমপ্রচারিত এক ভাষণে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, জনগণের উদ্বেগে সাড়া দিয়ে বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে সরকার।
লাম বলেন, বিগত তিন মাসের গণবিক্ষোভের দাবিতে সাড়া দিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নেবে তার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে, পার্লামেন্টে একটি পুলিশ বাহিনী পর্যবেক্ষণ সংস্থার দুইজন সদস্য নিয়োগ দেয়া, নাগরিকদের সঙ্গে একাধিক আলোচনা বৈঠকে বসা ও সামাজিক সমস্যা খতিয়ে দেখা। তিনি বলেন, এই মাস থেকে আমি ও আমার শীর্ষ কর্মকর্তারা সকল সমপ্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসবো। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানের মানুষকে তাদের মত জানাতে ও সমস্যার কথা জানাতে আহ্বান জানাবো।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর করে বৃটেন। এর আগে অঞ্চলটি একটি বৃটিশ কলোনি ছিল। তবে চীনের সঙ্গে যোগ হলেও, ‘এক দেশ, দুই নীতি’ নিয়মের অধীনে বেশ খানিকটা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে থাকে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে চলতি বছরের ৩রা এপ্রিল হংকং সরকার সন্দেহভাজন অপরাধীদের চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রত্যর্পণ করার একটি বিল উত্থাপন করে। তবে সমালোচকদের দাবি ছিল, বিলটি পাস হলে হংকংয়ের বিচার ব্যবস্থায় চীনা প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। এবং এতে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ হবে। পরবর্তীতে ৯ই জুন প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিলটি প্রত্যাহারের দাবিতে হংকং সরকারের সদর দপ্তরের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ পদযাত্রা করে। বিক্ষোভটি সামপ্রতিক বিক্ষোভগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ ছিল। প্রথম বিক্ষোভের তিনদিন পর ১২ই জুন নতুন করে বিক্ষোভে নামে বিলটির বিরোধীরা। তখন থেকে বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করা শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত টানা বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে হংকংয়ে। সময় যত গড়িয়েছে, বিক্ষোভ তত সহিংস আকার ধারণ করেছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠেছে। পাশাপাশি চীনা হস্তক্ষেপের অভিযোগও ওঠেছে। গত মাসে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সাদা পোশাক পরে চীনা গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। চীন অবশ্য সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যে জুন ও জুলাই মাসে বিলটি নিয়ে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল হংকং সরকার। তবে তাতে থামেনি বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীরা বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি যোগ হয়েছিল পুলিশি নৃশংসতার তদন্ত ও বিচার এবং গণতন্ত্র নিশ্চিতের দাবিও।
হংকংয়ের বিগত প্রায় তিন দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয় প্রত্যর্পণ বিলটি ঘিরে। উঠে সরকারের পদত্যাগের দাবিও। সমপ্রতি বিক্ষোভটি তীব্র সহিংস মোড় নেয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। তারা বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা চালায়। পার্লামেন্টে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। হংকংয়ের বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়তে থাকে বিক্ষোভের। এমতাবস্থায় বিক্ষোভকারীদের দাবিতে সাড়া দেয়া শুরু করেছে সরকার। তবে বিল প্রত্যাহারের ঘোষণায়ও স্বস্তি নেমে আসেনি হংকংয়ে। বুধবার শহরটির রাস্তায় দাঙ্গা পুলিশদের টহল দিতে দেখা গেছে। সিডনির ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাডাম নি জানান, কেবল বিল প্রত্যাহারে ক্ষোভান্বিত ও হতাশ জনগণ সন্তুষ্ট হবে না। এই আন্দোলনের ধরন গত ১৩ সপ্তাহে পাল্টে গেছে। তিনি যদি আরো পদক্ষেপ না নেন, তাহলে সামনে আরো বিক্ষোভ দেখবো আমরা।
Important News

Highlight of the week
