Studypress News

সূর্যের উদ্দেশ্যে প্রথম নভোযান ইউজেনে পার্কার

13 Aug 2018

এবার সূর্যের উদ্দেশ্যে নভোযান পাঠালো মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। এর মাধ্যমে অদ্ভুত ও রহস্যময় নক্ষত্র সূর্যকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে নভোযানটি পাঠানো হয়েছে। ১২ আগস্ট এই নভোযানটি উৎক্ষিপ্ত হয়।  

এটি হলো সূর্যের দিকে যাত্রা করা প্রথম নভোযান। নতুন যানটি কোরোনা বা সৌরমুকুট হিসেবে পরিচিত সূর্যের ভয়ঙ্কর গরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা করবে। কোরোনার কার্যকরণ জানতে পারলে মহাশূন্যের ভয়ানক আবহাওয়ার ঝড় ইত্যাদি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন। এই আবহাওয়া পৃথিবীর শক্তিকেও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারে।

নাসার সৌরবিজ্ঞানী অ্যালেক্স ইয়াং বলেন, পৃথিবীর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মতো করেই মহাশূন্যের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়ে এর মৌলিক গুরুত্ব রয়েছে। কোরোনা আমাদের কাছে খুবই অদ্ভুত ও অপরিচিত পরিবেশ।

৯১ বছরের বর্ষীয়ান সৌর জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীর নাম অনুসারে এই অভিযানের নাম দেওয়া হচ্ছে ইউজেনে পার্কার। উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে সূর্য থেকে ৬১ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরের স্তর অতিক্রমের জন্য এই মিশন চালানো হচ্ছে। এটিই হতে যাচ্ছে সূর্যকে ছোঁয়ার প্রথম মিশন।

জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ গবেষণাগারের বিজ্ঞানী নিকি ফক্স যুক্ত রয়েছেন এই প্রকল্পের সঙ্গে। তিনি বলেন, নভোযানটির সূর্যের দিকে থাকা অংশটি ১৩৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে। নভোযানটি একটি হিট শিল্ডের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে। এর ফলে ভেতরের তাপমাত্রা সাধারণভাবে ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা রুমের তাপমাত্রার মতোই থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল বেগে চলা যানটি মানুষের তৈরি সবচেয়ে দ্রুতগামী যান হতে যাচ্ছে।

সাত বছরের বেশি সময়ের এই অভিযানে নভোযানটি ২৪ বারের মতো কোরোনা অতিক্রম করবে।

সাধারণত ক্যাম্পফায়ারে কেন্দ্রের দিকে তাপমাত্রা বেশি হলেও সূর্যের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। এর ভূপৃষ্ঠের চেয়ে কিছুটা দূরেই বেশি তাপমাত্রা থাকে। ফক্স বলেন, ‘সূর্যের ভূপৃষ্ঠের দিকে যেতে থাকলে আমরা ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে কোরোনায় প্রবেশ করা মাত্র তা ১০ লাখ ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে।

নাসা এই তারতম্যকে ‘কোরোনাল তাপমাত্রা সমস্যা’ বলে অভিহিত করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে হঠাৎ করে এভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার রহস্যও সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

ফক্স বলেন, বিজ্ঞানীরা যেভাবে সম্ভব কোরোনা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এখন কাছ থেকে এটা দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের এই কার্যকর অঞ্চলে প্রবেশ করা প্রয়োজন, যেখানে আসলে এসব রহস্য সংঘটিত হয়।

নতুন নভোযানটি সাড়ে চার ইঞ্চি পুরু কার্বন-যৌগ বর্ম দিয়ে সুরক্ষিত থাকবে। এটা পৃথিবীতে সূর্যের তেজষ্ক্রিয়তার ৫০০ গুণ তেজস্ক্রিয়তা প্রতিহত করতে সক্ষম। নভোযানটিতে থাকা অনেকগুলো যন্ত্র সেখানকার চুম্বকীয় ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র, প্লাজমা তরঙ্গ ও উচ্চ শক্তির কণা পরিমাপ করবে।

ফক্স বলেন, নভোযানটি কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা জানার জন্য সেখানে একটি সাদা হালকা ক্যামেরা থাকবে। সেখানে সব সময়ই যন্ত্রপাতি থাকবে। কিন্তু তথ্য সংগ্রহের প্রধান সময় হলো ১১ দিন।