Studypress News

জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ

04 Jul 2018

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও মৌসুমি গতিধারায় পরিবর্তন আসবে। কমবে মানুষের আয়। আর ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হবে। তবে দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এমন আশঙ্কা  ব্যক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক। 

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এশিয়া টাইমস লিখেছে, প্রতি দুই ভারতীয়ের একজন জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন নেতিবাচক ভাবে আক্রান্ত হবেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার যেসব এলাকা বেশি আক্রান্ত হবে, সেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এছাড়া এখনই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে যেই পরিবর্তন আসবে, তার সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়টি প্রথমবারের মতো এই প্রতিবেদনে দেখানো সম্ভব হয়েছে। মানুষের আয়ে কী পরিবর্তন আসতে পারে তার পূর্বাভাস দিতে দুটি ভিন্ন দৃশ্যকল্প বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে সংশ্লিষ্ট দেশ যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে, তাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে বৃষ্টিপাত কমার কারণে এই দেশগুলো খাবার পানির সংকটে ভুগবে।

কার্বন নির্গমন ঠেকাতে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৪.৪% কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে তা হবে ৯.৮% ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে ১০%। তবে জলবায়ু-বান্ধব নীতিমালা নেয়া হলে প্রভাব আরও কম ক্ষতিকর হবে।

বিশ্বব্যাংকের এই গবেষণায় আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের বদলে প্রতিদিনকার আবহাওয়ার পরিবর্তনকে আমলে নেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বিশ্লেষণে দেখা গেছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে সুবিধাহীন জেলাসমূহ। এসব অঞ্চলের অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে পরিবারপ্রতি স্বল্প খরচ, দুর্বল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজারে সীমিত প্রবেশাধিকার ও অন্যান্য উন্নয়ন সীমাবদ্ধতা।’ ভারতের ক্ষেত্রে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান অঞ্চলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ এমন সব অঞ্চলে বসবাস করেন যেখানে ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষতির ঝুঁকি মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রার হবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে।’

পাকিস্তানের করাচির মতো শহরে বর্ধিত তাপমাত্রার ফলে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে। জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল ও পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এশিয়ার সবচেয়ে উষ্ণতম অঞ্চলের অন্যতম। এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১৯৫০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১-৩ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে নেপালের মতো তুলনামূলকভাবে শীতপ্রবণ দেশসমূহ তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে উপকূলীয় অঞ্চলের রয়েছে আরেক ঝুঁকি, অর্থাৎ বর্ধিষ্ণু সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। মালদ্বীপের মতো উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্র আছে বিশেষ ঝুঁকিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কিছুটা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কী পদক্ষেপ নেয়, তার ওপর। যদি এই অঞ্চলের দেশসমূহ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ও বার্ষিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার সীমিত করতে পারে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক কম মানুষ। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, এই অঞ্চলের দেশসমূহ বার্ষিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখতে পারলে, সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭.৫ কোটিতে নেমে দাঁড়াবে। এছাড়া শিক্ষার প্রসার, পানির ওপর চাপ হ্রাস ও অ-কৃষিপ্রধান অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরো কমবে।