Studypress News

অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি

06 Jun 2018

কৃষি : ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল ২১. ৮ ভাগ৷ ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর – এ সময়ে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমতে থাকে৷ ফলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দাড়ায় ১৮.৭ ভাগ৷ সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপিতে সেবাখাতের অবদান ৫৩.৩৯ ভাগ, শিল্প খাতের ৩৩.৭১ এবং কৃষি খাতের ১৫.৩৩ ভাগ৷ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি বৃহৎখাতের মধ্যে কৃষির অবদান এখন তৃতীয়৷
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ সালে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৪৮.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ যার ৯০ ভাগ তখন আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে৷ আশির দশকে এ ধারার পরিবর্তন শুরু হয়ে, যা এখন আরো দ্রুত হচ্ছে৷ কৃষির জায়গা দখল করে নিচ্ছে শিল্প এবং সেবা খাত৷ বর্তমানে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয় মিলিয়ন নয়, ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
কৃষি উৎপাদনও বাড়ছে - ৪৪ বছরে দেশের আলু চাষের জমি সাড়ে ৫ গুণ বেড়েছে৷ ফলন বেড়েছে ১০.৯ গুণ৷ এই সময়ে গমের উৎপাদন বেড়েছে ১২.২৫ গুণ৷ ভুট্টার ফলন বৃদ্ধির হার রীতিমতো বিস্ময়কর৷ এ পর্যন্ত দেশে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৭৫৭ গুণ৷ আর এ ফসলের জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ৷
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়৷ স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ৷ এখন প্রায় সারা বছরই ২০ থেকে ২৫ জাতের সবজি উৎপাদন হয়৷ গত এক দশকে বাংলাদেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে৷
এফএও বলছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চিন৷ এফএও-র হিসাবে সমুদ্রে মাছ আহরণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম৷
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭১ থেকে ২০১৫ সাল এই ৪৪ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে ৩ থেকে ৭৫৭ গুণ৷
জিডিপিতে সাত খাতের অবদান বেড়েছে
পাঁচ খাতের অবদান কমেছে :
মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান কমছে। কৃষির তিনটি উপখাতের একই অবস্থা। জিডিপিতে কৃষি ছাড়াও পরিবহন, যোগাযোগ, রিয়েল এস্টেট খাতের নেতিবাচক অবস্থার চিত্র ওঠে এসেছে পরিসংখ্যানে। তবে ভালো অবস্থানে আছে খনিজ ও খনন, শিল্প, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি।
 
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তি মূল্যে ধরা হয়েছে। এতে জিডিপিতে খাতওয়ারি অবদানের ক্ষেত্রে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্থির মূল্যে কৃষি ও বনজ খাতের অবদান ধরা হয়েছে ১২.১৭ শতাংশ। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতের প্রকৃত অবদান ছিল ১২.৮১ শতাংশ। আগের অর্থবছরের মতো ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও জিডিপিতে কৃষি ও বনজ খাতের অন্তর্ভুক্ত তিনটি উপখাতের অবদান কমেছে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শস্য ও শাকসবজি উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ৮.৮৩ শতাংশ। যেখানে এর আগের বছর অবদান ছিল ৯.২৮ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে বিগত ৯ বছরের সর্বোচ্চ অবদান ছিল শস্য ও শাকসবজি উপখাতের ১১.০৮ শতাংশ। যদিও এরপর থেকেই জিডিপিতে এ উপখাতটির অবদান কমেছে। দ্বিতীয় উপখাত প্রাণিসম্পদের একই অবস্থা। জিডিপিতে এ উপখাতের অবদান ১.৭৩ শতাংশ। সেখানে এর আগের অর্থবছরে অবদান ছিল ১.৭৮ শতাংশ। বনজ সম্পদ উপখাতের জিডিপিতে অবদান ১.৭২ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১.৭৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তি মূল্যে ধরা হয়েছে ১৫.৬৯ শতাংশ।
তবে জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান আগের অর্থবছরের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে ৩.৬৯ শতাংশে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও এ খাতের অবদান ছিল ৩.৬৯ শতাংশ। জিডিপিতে খাতটির সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। এ সময় অবদানের পরিমাণ ছিল ৩.৭৯ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অবদান ছিল ৩.৭৮ শতাংশ। দুই বছরের তুলনায় জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান অপরিবর্তিত থাকলেও ২০১২-১৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩.৬৮ শতাংশ।
এছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। একই সঙ্গে এ খাতের তিনটি উপখাতেরও একইভাবে জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১.৪৩ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১.৪২ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১.১৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিনটি উপখাতের মধ্যে বিদ্যুৎতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১.২০ শতাংশ, গ্যাস উপখাতের ০.১৪ শতাংশ এবং পানি উপখাতের ০.০৯ শতাংশ, যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ১.১৯ শতাংশ, ০.১৫ শতাংশ, ০.০৯ শতাংশ।
জিডিপিতে নির্মাণ খাতের অবদানও বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে এ খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ৭.১৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৭.০৩ শতাংশ। পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। এ খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১৪.১২ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১৪.১০ শতাংশ, যেখানে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে অবদান ছিল ১৩.৭৮ শতাংশ। হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতের জিডিপিতে অবদান অপরিবর্তিত রয়েছে। এ খাতের অবদান ০.৭৫ শতাংশ।
জিডিপিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো অবস্থানে ছিল। এ খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ৩.৪১ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৩.৩৪ শতাংশ। এ খাতের তিনটি উপখাতের মধ্যে ব্যাংকের জিডিপিতে অবদান ছিল ২.৮৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ২.৭৯ শতাংশ। বীমা উপখাতের অবদান ছিল ০.৩৬ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছরে ছিল ০.৩৭ শতাংশ। অন্যান্য উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ০.১৮ শতাংশ।
এক বছরের ব্যবধানে জিডিপিতে অবদান বেড়েছে শিক্ষা খাতের। এ খাতের মোট অবদান ২.২৮ শতাংশ, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২.২৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১.৮৪ শতাংশ।
পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাতের অবস্থা কিছুটা নাজুক। জিডিপিতে এ খাতের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১১.৪৪ শতাংশ। সেখানে আগের অর্থবছর ২০১৩-১৪ সময়ে ছিল ১১.৪৯ শতাংশ। এ খাতের পাঁচটি উপখাতের মধ্যে তিনটি উপখাতের অবদান কমেছে। একটি অপরিবর্তিত রয়েছে এবং একটির বেড়েছে। এর মধ্যে স্থলপথ পরিবহন খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ৭.১৯ শতাংশ। যদিও এর আগের অর্থবছরে জিডিপিতে এর অবদান ছিল ৭.২৭ শতাংশ। পানি পরিবহন খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ০.৭৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এর অবদান ছিল ০.৮১ শতাংশ। আকাশপথ পরিবহন খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ০.১২ শতাংশ। সহযোগী পরিবহন সেবা ও সংরক্ষণ খাতের অবদান ছিল ০.৬৪ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এর অবদান ছিল ০.৬৫ শতাংশ। ডাক ও তার যোগাযোগ খাতের অবদান ছিল ২.৭০ শতাংশ, যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর অবদান ছিল ২.৬৪ শতাংশ।