Studypress News
ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে আসলে কী আছে?
14 May 2018

ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ৮ই মে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। ইরানের সাথে কি ছিল এই পারমানবিক চুক্তিতে?
২০১৫ সালে ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সাথে তার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া, অর্থাৎ পি ফাইভ প্লাস ওয়ান নামে পরিচিত পরাশক্তিগুলি ছিল এই চুক্তির অংশীদার।
দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচি বৃদ্ধি করায় কয়েক বছর ধরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। যদিও ইরান তার কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছিল, কিন্তু তা বিশ্বাস করেনি বিশ্বের পরাশক্তিগুলো।
পারমাণবিক চুল্লীর জ্বালানি হিসেবে যেমন ইউরেনিয়ামের ব্যবহার তেমনি এটি দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিও সম্ভব।
তবে ২০১৫ সালের চুক্তির পর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হয় এবং দেশটির বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেবার শর্তে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে অনুমতি দেয়।
জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ'র পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন- সে ব্যাপারে সম্মতি দেয় তেহরান।
সেসময় বারাক ওবামা প্রশাসন আত্মবিশ্বাসী ছিল যে এর অধীনে ইরান কোনও ধরনের গোপন পারমাণবিক কর্মকাণ্ড চালাবে না। ইরানও তা নিশ্চিত করে।
নানতাজ এবং ফোর্ডো- ইরানের এই দুটি জায়গায় গড়ে ওঠা পারামণবিক কেন্দ্রে জড়ো করা হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়ামের বিশেষ আইসোটোপ ইউ-২৩৫। যা কিনা অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায় ১৫ বছর পর্যন্ত পরমাণু জ্বালানি রাখার পরিমাণ, সেন্ট্রি-ফিউজসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সীমারেখা টেনে দেয়া হয়। শর্ত থাকে ইরান সেন্ট্রি-ফিউজ দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করবে।
বর্তমানে ইরানের কাছে যে ইউরেনিয়াম আছে তা থেকে ৯৮ শতাংশ কমিয়ে ৩শ কেজিতে নামিয়ে আনতে হবে। ফোর্ডো কেন্দ্রের ভূ-গর্ভস্থ অংশকে বানাতে হবে পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে কেবলমাত্র চিকিৎসা, কৃষি ও বিজ্ঞান গবেষণায় ব্যবহৃত রেডিও আইসোটোপ তৈরি করা যাবে।
আর্ক শহরের কাছে ইরানে একটি পারমাণবিক একটি চুল্লী ছিল। যেখান থেকে প্লুটোনিয়াম পাওয়া যায় যা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব পরাশক্তিগুলো বেশকিছু দিন ধরেই ইরানের এই কর্মসূচীর বিরোধিতা করে আসছিল।
চুক্তি অনুযায়ী ইরান সম্মত হয় যে তারা অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম প্লুটোনিয়াম উৎপাদন বন্ধ রাখবে।
ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছিল তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হিসেব অনুযায়ী ৮-১০টি পরমাণু বোমা তৈরি করা সম্ভব। আর সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে অর্থাৎ চাইলেই ২-৩ মাসের মধ্যেই বোমা তৈরি সম্ভব বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ধারনা ছিল। এই সময়সীমাকে বলা হতো 'ব্রেক-আউট টাইম'।
চুক্তির অধীনে পরমাণু বোমা তৈরির সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলো সরিয়ে ফেলা হয় যাতে করে 'ব্রেক-আউট টাইম' হয় এক বছরেরও বেশি।
আর ইরানের এসব শর্ত মেনে নেয়ার বিনিময়ে দেশটির বিরুদ্ধে আরোপ করা বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয় । দেশটি আবারো ফিরে পায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেল বিক্রি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ।
শর্ত অনুযায়ী, ২০৩১ সালের মধ্যে ইরান যদি চুক্তির কোনও শর্ত লঙ্ঘন করে তাহলে একটি যৌথ কমিশন গঠিত হবে। কমিশন যদি সমাধান করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উঠবে।
সূত্র: বিবিসি অনলাইন
Important News

Highlight of the week
