Studypress News
জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ২৩
10 Nov 2017
জার্মানির প্রাক্তন রাজধানী বনে ৬ই নভেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর ২০১৭ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ২৩ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস) বিশ্বের ১৯৭টি দেশের ২৩,০০০ প্রতিনিধি ১২ দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন৷
এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৩ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজিতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশটি বিশাল এ আয়োজন করতে অসমর্থ হওয়ায় জার্মান সরকার এ দায়িত্ব নিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নানা ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদরা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্টরা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা বনে কপ২৩ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। কপ-২৩ সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদসহ একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছে।
জলবায়ু এবং জলবায়ু সম্মেলন সম্পর্কিত তথ্য :
প্যারিস চুক্তি
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সম্পাদিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এক বড় সাফল্য৷ বিশ্বের ১৬৯টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে৷ তবে এই চুক্তি বাস্তবায়ন এখনো এক ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে৷ আর চুক্তির কিছু বিষয় এখনো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ সম্ভব হয়নি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় এটির গুরুত্বও খানিকটা কমে গেছে৷
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা কিংবা সম্ভব হলে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে রাখা৷
ক্লাইমেট টেকনোলজি অ্যান্ড নেটওয়ার্ক (সিটিসিএন): এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নশীল দেশগুলির অনুরোধে ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে কম কার্বন নিঃসরণ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উপযোগী করে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়৷ প্রযুক্তিগত সমাধান, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে পরামর্শ, আইন এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি এ নেটওয়ার্কের উদ্যেশ্য৷
গ্রিনহাউস গ্যাস: কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস-অক্সাইড, পানির বাষ্প ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যা সূর্যের আলো বেশি শোষণ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে৷ যত বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তত বেশি তাপমাত্রা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতরে আটকে থাকে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে৷
ফসিল ফুয়েল: জীবাষ্ম জ্বালানি হলো, শক্তির এমন উৎস, যা শত শহস্র বছর ধরে জীবন্ত প্রাণির অবশিষ্টাংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকতে থাকতে তৈরি হয়৷ শক্তির এ উৎস নবায়নযোগ্য নয়৷ কয়লা বা তেলের মতো মাটির নীচ থেকে পাওয়া শক্তির উৎসের ব্যবহার পৃথিবীতে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম কারণ৷ সময়ের সাথে সাথে যতই জ্বালানির প্রয়োজন বাড়ছে, ততই বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এ জীবাষ্ম জ্বালানি এবং সেই সাথে বাড়ছে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ৷ ফলশ্রুতিতে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে পৃথিবীর উত্তাপ৷
ইন্টেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি): এ বছর জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে প্রস্তাবিত জলবায়ু চুক্তির আওতায় দেশগুলো ২০২০ সালে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা নির্ধারণ করে থাকে৷ আইএনডিসি হিসেবে পরিচিত এ পরিকল্পনার একটা বড় অংশ থাকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমানো৷
ইন্টারগভার্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি ): ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের দু'টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয়৷ এ প্যানেল মূলত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের উপর গবেষনা করে থাকে৷ এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বর্তমান অবস্থা জনগণের কাছে তুলে ধরাই এ প্যানেলের উদ্দেশ্য৷
কিয়োটো প্রটোকল: একটি বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি৷ এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলিকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে দায়বদ্ধ করা হয়৷ ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের জাপানের কিয়োটো শহরে এই চুক্তি প্রথম গৃহীত হয়৷ উন্নত দেশগুলিকে মূলত গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করে এই চুক্তি উন্নত দেশগুলিকে এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে বলে৷ এর ফলে ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশের নিঃসরণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়৷ ওই চুক্তিতে ১২৯টি দেশ সমর্থন দিয়েছিল৷ তবে পরবর্তীতে চুক্তি থেকে ২০১২ সালে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় কানাডা৷