Studypress News
আজ ২৩ই অক্টোবর কবি শামসুর রাহমান এর জন্মদিন
23 Oct 2017
আজ ২৩ই অক্টোবর কবি শামসুর রাহমান এর জন্মদিন। তিনি বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে দুই বাংলায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন নাগরিক কবি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তাঁর দুটি কবিতা খুবই জনপ্রিয়।
তাঁর জন্ম ঢাকার মাহুতটুলির নানাবাড়িতে। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পিতার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে।
শামসুর রাহমান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এরপর তিনি আবার ফিরে আসেন তার পুরানো কর্মস্থল দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ। তিনি সেখানে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর, ১৯৬৪ থেকে শুরু করে সরকারি দৈনিক দৈনিক পাকিস্তান এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭ এর জানুয়ারি পর্যন্ত (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা)। ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ তে তিনি দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ করেন। অতঃপর তিনি অধুনা নামীয় মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বরাবরই ছিলেন দেশ এবং মানুষের স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চার। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তাঁর চেতনায় প্রবাহিত ছিল। শামসুর রাহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল (পত্রিকা) পত্রিকায় লেখেন 'হাতির শুঁড়' নামক কবিতা। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা 'টেলেমেকাস' (১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সালে)। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যাতে আরো স্বাক্ষর করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দীন। ১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান যার প্রতিবাদে আগস্টে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন যাদের একজন ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা'। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হন শামসুর রাহমান এবং তিনি লিখেন 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি। ১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর ঘূর্ণিদুর্গত দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ও মৃত্যুতে কাতর কবি লেখেন 'আসুন আমরা আজ ও একজন জেলে' নামক কবিতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা'। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে 'শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা', দ্বিতীয় বছরে 'স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা', তৃতীয় বছরে 'সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা' এবং চতুর্থ বছরে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা' লেখেন। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন 'গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা'।
কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৩৫ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, নিজ মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা
কাব্যগ্রন্থ - ৬৬
উপন্যাস - ৪
প্রবন্ধগ্রন্থ - ১
ছড়ার বই - ১। এলাটিং বেলাটিং, ৮
অনুবাদ - ৬
কাব্যগ্রন্থ
প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৬০)
রৌদ্র করোটিতে (১৯৬৩)
বিধ্বস্ত নিলীমা (১৯৬৭)
নিরালোকে দিব্যরথ (১৯৬৮)
নিজ বাসভূমে (১৯৭০)
বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২)
দুঃসময়ে মুখোমুখি (১৯৭৩)
ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা (১৯৭৪)
আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি (১৯৭৪)
এক ধরনের অহংকার (১৯৭৫)
আমি অনাহারী (১৯৭৬)
শূন্যতায় তুমি শোকসভা (১৯৭৭)
বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে (১৯৭৭)
প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে (১৯৭৮)
ইকারুসের আকাশ (১৯৮২)
মাতাল ঋত্বিক (১৯৮২)
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে (১৯৮৩)
কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি (১৯৮৩)
নায়কের ছায়া (১৯৮৩)
আমার কোন তাড়া নেই (১৯৮৪)
যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে (১৯৮৪)
অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই (১৯৮৫)
হোমারের স্বপ্নময় হাত (১৯৮৫)
শিরোনাম মনে পড়ে না (১৯৮৫)
ইচ্ছে হয় একটু দাঁড়াই (১৯৮৫)
ধুলায় গড়ায় শিরস্ত্রাণ (১৯৮৫)
এক ফোঁটা কেমন অনল (১৯৮৬)
টেবিলে আপেলগুলো হেসে উঠে (১৯৮৬)
দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে (১৯৮৬)
অবিরল জলভ্রমি (১৯৮৬)
আমরা ক'জন সঙ্গী (১৯৮৬)
ঝর্ণা আমার আঙুলে (১৯৮৭)
স্বপ্নেরা ডুকরে উঠে বারবার (১৯৮৭)
খুব বেশি ভালো থাকতে নেই (১৯৮৭)
মঞ্চের মাঝখানে (১৯৮৮)
বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় (১৯৮৮)
হৃদয়ে আমার পৃথিবীর আলো (১৯৮৯)
সে এক পরবাসে (১৯৯০)
গৃহযুদ্ধের আগে (১৯৯০)
খন্ডিত গৌরব (১৯৯২)
ধ্বংসের কিনারে বসে (১৯৯২)
হরিণের হাড় (১৯৯৩)
আকাশ আসবে নেমে (১৯৯৪)
উজাড় বাগানে (১৯৯৫)
এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা (১৯৯৫)
মানব হৃদয়ে নৈবদ্য সাজাই (১৯৯৬)
তুমিই নিঃশ্বাস তুমিই হৃৎস্পন্দন (১৯৯৬)
তোমাকেই ডেকে ডেকে রক্তচক্ষু কোকিল হয়েছি (১৯৯৭)
হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল (১৯৯৭)
ছায়াগণের সঙ্গে কিছুক্ষণ (১৯৯৭)
মেঘলোকে মনোজ নিবাস (১৯৯৮)
সৌন্দর্য আমার ঘরে (১৯৯৮)
রূপের প্রবালে দগ্ধ সন্ধ্যা রাতে (১৯৯৮)
টুকরা কিছু সংলাপের সাঁকো (১৯৯৮)
স্বপ্নে ও দুঃস্বপ্নে বেচে আছি (১৯৯৯)
নক্ষত্র বাজাতে বাজাতে (২০০০)
শুনি হৃদয়ের ধ্বনি (২০০০)
হৃদপদ্মে জ্যোৎস্না দোলে (২০০১)
ভগ্নস্তূপে গোলাপের হাসি (২০০২)
ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুকছে (২০০৩)
গন্তব্য নাই বা থাকুক (২০০৪)
কৃষ্ণপক্ষে পূর্ণিমার দিকে (২০০৪)
গোরস্থানে কোকিলের করুণ আহবান (২০০৫)
অন্ধকার থেকে আলোয় (২০০৬)
না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন (২০০৬)
শিশু কিশোর সাহিত্য
এলাটিং বেলাটিং (১৯৭৪)
ধান ভানলে কুঁরো দেব (১৯৭৭)
গোলাপ ফোটে খুকীর হাতে (১৯৭৭)
স্মৃতির শহর (১৯৭৯)
রংধনুর সাঁকো (১৯৯৪)
লাল ফুলকির ছড়া (১৯৯৫)
নয়নার জন্য (১৯৯৭)
আমের কুঁড়ি জামের কুঁড়ি (২০০৪)
নয়নার জন্য গোলাপ (২০০৫)
উপন্যাস
অক্টোপাশ (১৯৮৩)
অদ্ভুত আঁধার এক (১৯৮৫)
নিয়ত মন্তাজ (১৯৮৫)
এলো সে অবেলায় (১৯৯৪)
আত্মস্মৃতি
স্মৃতির শহর (১৯৭৯)
কালের ধুলোয় লেখা (২০০৪)
অনুবাদ কবিতা
ফ্রস্টের কবিতা (১৯৬৬)
রবার্ট ফ্রস্টের নির্বাচিত কবিতা (১৯৬৮)
খাজা ফরিদের কবিতা (১৯৬৮)
অনুবাদ নাটক
হৃদয়ের ঋতু (মূল: টেনেসি উইলিয়মস)
মার্কোমিলিয়ান্স্ (মূল: ইউজিন ও'নীল; ১৯৬৭)
হ্যামলেট (মূল: উইলিয়ম শেক্সপিয়র; ১৯৯৫)
প্রবন্ধ
আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ (১৯৮৬)
শামসুর রাহমানের প্রবন্ধ (২০০১)
কবিতা এক ধরনের আশ্রয় (২০০২)
নিবন্ধ
কবে শেষ হবে কৃষ্ণপক্ষ (২০০৬)
কলাম
একান্ত ভাবনা (২০০১)
গল্প
শামসুর রাহমানের গল্প (২০০২)
সম্মাননা ও পুরস্কার
আদমজী সাহিত্য পুরস্কার
বাংলা একাডেমি পুরস্কার
একুশে পদক
নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক
জীবনানন্দ পুরস্কার
আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার
মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিতার জন্য)
স্বাধীনতা পদক
আনন্দ পুরস্কার
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।
তথ্যসূত্র: উইকিপেডিয়া