Studypress News
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড
26 Jul 2017
চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ব্রেন চাইল্ড’ হিসেবে নেয়া হয়েছে একটি মহাপরিকল্পনা। এটি হচ্ছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ অর্থাৎ এক অঞ্চল এক পথ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। কি নেই এতে? এতে আছে চীনের সাথে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের অন্তত ৭০টি দেশের জলে ও স্থলে সংযোগ স্থাপনের (কানেকটিভিটি) পরিকল্পনা। আছে এসব অঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণ, সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বাড়ানোর উন্নয়ন পরিকল্পনা। স্থলভিত্তিক সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং সমুদ্রগামী মেরিটাইম সিল্ক রোড এই উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত। চীনাদের বিশ্বাস তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে নতুন করে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান ঘটবে।
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডকে সংক্ষেপে ‘ওবর’ অথবা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভও বলা হয়। এর মাধ্যমে চীন তার উন্নয়নের সাথে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নের যোগসূত্র রচনা করতে চাইছে। এটাকে চীন সম্মিলিত উন্নয়নের ‘চীনা স্বপ্ন’ বলে বর্ণনা করছে।
বলা যায় যে,চীনাদের কাছে এখন একমাত্র অগ্রাধিকার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইটি) নামে চীনের নেতৃত্বে ১০ হাজার কোটি ডলারের মূলধনে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া চীন চার হাজার কোটি ডলারের সিল্ক রোড তহবিল গঠন করেছে। চীন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়েছে। প্রকল্পটির ব্যাপারে চীনের সাথে ৪৪টি দেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের সাথে জড়িত দেশগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্য ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি দেশ সফর করেছেন। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নামের এই নতুন চীনা স্বপ্নের জন্মদাতা তিনিই। ২০১৩ সালের অক্টোবরে পৃথিবীর সামনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার এই ভিশনারি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যা চীনের সাথে বাইরের দুনিয়ার সম্পর্ক পুননির্ধারণে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বিশ্বের একটি আলোচিত বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) এবং ট্রান্স আটলান্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ (টিটিআইপি) চুক্তির বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’কে।
প্রাচীন সিল্ক রোডকে ভিত্তি করেই নতুন এই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ প্রকল্পে জড়িত ৭০টি দেশে চার-আট লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হতে পারে। এতে তিনটি বেল্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নর্থ বেল্ট মধ্য এশিয়া থেকে রাশিয়া ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সেন্ট্রাল বেল্ট মধ্য এশিয়া থেকে পশ্চিম এশিয়া হয়ে পারস্য উপসাগর এবং ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যাবে। আর সাউথ বেল্ট চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
অন্য দিকে মেরিটাইম সিল্ক রোডের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো এবং উত্তর আফ্রিকা। এটি দক্ষিণ চীন সাগর, দক্ষিণ প্রশান্ত সাগর এবং ভারত মহাসাগরকে এক বেল্টে নিয়ে আসবে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বা এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের বৃহত্তম মালিকানা থাকবে চীনের হাতে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যক্রম শুরু করেছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ এর সদস্য না হলেও কানাডা গত সেপ্টেম্বরে এর সদস্য হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি ও ফিলিপাইনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোও এর সদস্য। বছরে ১০০০-১৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যাংকটির।
তবে ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের আগেই এ অঞ্চলের অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চীন। কাজাখস্তানে তেল পাইপলাইন তৈরি করেছে চীন। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে চীনে তেল সরবরাহের জন্য আরো একটি পাইপলাইন বানিয়েছে চীন। এ অঞ্চলে সড়ক, সেতু ও টানেল নির্মাণ করছে চীনা কোম্পানিগুলো।
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের অংশ হিসেবে চীন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছে, তেমনি গুরুত্ব দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকেও। চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নীতিতে ইরান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে চীনের এ প্রকল্প হতে হলে ইরানের পাশাপাশি মিসর ও ইসরাইলও চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে চীন মিসরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। ইরানের সাথেও চীন ছয় হাজার কোটি ডলারে বাণিজ্যচুক্তি করেছে। চীন সফলভাবেই মিসর, ইরান ও ইসরাইলকে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পে ঢোকাতে পেরেছে।
এ দিকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমারের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর। তেমনি চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মিয়ানমার- চারটি দেশের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে গড়ে তোলা বিসিআইএম করিডোরের আওতায় চীন ও ভারতের মধ্যে প্রথমবারের মতো এক্সপ্রেসওয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে যুক্ত করবে।
এ করিডোরের মাধ্যমে চারটি দেশের পণ্য ও জ্বালানির বাজার সুবিধা আরো সম্প্রসারিত হবে। এতে অশুল্ক বাধা কমবে, বাণিজ্য সুবিধা এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। এই করিডোর ১৬ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংযুক্ত করবে যেখানে বাস করছেন প্রায় ৪৪ কোটি মানুষ। বিসিআইএম করিডোরের ধারণাটি বহু আগে বাংলাদেশেরই দেয়া। ‘কুনমিং ইনিশিয়েটিভ’ নামে চীনের কুনমিং এ অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতার এই ধারণাটি প্রথম দেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। এ জন্য তাকে বিসিআইএমের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা হয়।
এই করিডোর সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানপথে চীনের কুনমিং, ভারতের কলকাতা, বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের মান্দালয়কে যুক্ত করবে। বিসিআইএম করিডোর বাস্তবায়ন নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও ভারতের বিচ্ছিন্ন পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় এখন ভারতও এই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) বাস্তবায়ন দ্রুত হচ্ছে। চীন এ লক্ষ্যে পাকিস্তানে প্রায় ৫০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এই রুটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির। এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে।
সিপিইসি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানে সাত লাখ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আশা করছে পাকিস্তান সরকার। এতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২-২.৫ শতাংশ হারে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে চীনের জিনজিয়াংয়ের সাথে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর যুক্ত হবে। পাকিস্তানের করাচি ও লাহোরের মধ্যে মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। পাকিস্তানের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে আরো ১০,৪০০ মেগাওয়াট। ইতোমধ্যেই এই প্রকল্প আংশিক চালু হয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতেই ৫০০ টন পণ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো চীনের কুনমিং বন্দর থেকে একটি ট্রেন করাচির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
চীনের উচ্চাভিলাষী এই প্রকল্প নিয়ে নয়াদিল্লির শাসকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এর কারণ প্রধানত তিনটি। প্রথমত, এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে চীনের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে। দ্বিতীয়ত, ভারতের চির বৈরী পাকিস্তানে এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে এবং তৃতীয়ত, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগরে চীনের উপস্থিতি বাড়বে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বন্দর উন্নয়নে চীন বিপুল বিনিয়োগ করবে। ইতোমধ্যে চীনের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের সহায়তায় শ্রীলঙ্কার পোর্ট সিটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারতের আশঙ্কা এই প্রকল্পের অজুহাতে চীনা সাবমেরিন পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে অবস্থান করবে এবং চীন পারস্য উপসাগরে নজরদারি করবে। এই জলরাশি ব্যবহার করে বিশ্বের পরিবহন জাহাজের বেশির ভাগই ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে যাতায়াত করে। তবে ভারতের আশঙ্কা প্রশমনের কাজ করছে চীন। চীনারা সাধারণত সূক্ষ্ম কূটনীতির পথে চলে। মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে গ্যাস পাইপলাইন চীনের ইউনানে নিয়ে যাওয়া নিয়ে জটিলতা হয়েছিল। ভারত এ ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলে চীন ভারতকে অংশীদার করে দেন। তেমনি শ্রীলঙ্কায় চীনের বড় বিনিয়োগ নিয়েও ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। চীন এখন এ প্রকল্পের সাথে ভারতকে জড়িত করে উদ্বেগের অবসান ঘটিয়েছে। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর ও সিপিইসির ক্ষেত্রেও চীন একই নীতি অনুসরণ করতে পারে।
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নীতি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার পর ২০১৪ সালের ১৫ মে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে শি জিনপিং চীনের বন্ধুদের উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন, এতে ১১৫টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেয়। তিনি বলেন, ‘চীন এই শতাব্দীর মাঝামাঝিতে একটি আধুনিক সমাজবাদী দেশে পরিণত হবে; যা বিত্তশালী, ক্ষমতাবান, গণতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আগুয়ান দেশ হিসেবে চীনের জাতীয় নবায়নের স্বপ্ন সার্থক করবে। চীনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন পৃথিবীতে একটি বিশাল সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।’ ভাষণে তিনি আরো বলেন, শত শত নদী বরণ করেই সাগর বিশাল আকার ধারণ করে। চীন নিজেকে বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করবে, পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এবং সিল্ক রোড অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং একবিংশ শতাব্দীর সমুদ্রগামী সিল্ক রোডের উন্নয়ন করবে। যাতে দেশগুলো তাদের উন্নয়ন সম্ভাবনা ভাগ করে নিতে পারে। অধিকতর উন্মুক্ততা নিয়ে চীন সাংস্কৃতিকভাব বিনিময় করবে, যাতে বিশ্ব সভ্যতা পারস্পরিক শিক্ষালাভের ভিত্তিতে এগিয়ে যায়।’ তার এই চিন্তাধারার প্রতিফলনই ঘটেছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উন্নয়ন কৌশলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর মাধ্যমে চীন বিশ্ব মঞ্চে বৃহত্তর ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ চীনের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে আসছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এবং দুই দেশের নেতৃবৃন্দের আলোচনা ও সিদ্ধান্তে এ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে বলেছে, চীনের উত্থাপিত এক অঞ্চল এক পথ কৌশল দুই দেশের সামনে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও অভিন্ন কল্যাণ লাভের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ঢাকায় চীনের প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক অঞ্চল এক পথ কৌশল বাস্তবায়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের কাঠামোয় দুই পক্ষের বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করব যাতে দুই দেশের জনগণ সত্যিকার অর্থেই উপকৃত হয়।’ চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক প্রথম দফায় যেসব প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পও রয়েছে। চীন বাংলাদেশকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চীন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সুশাসনের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে, যার মধ্যে আছে দুর্নীতি থেকে সংস্কার প্রক্রিয়ার অদক্ষ বাস্তবায়ন। একই ভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনাও আরেকটি জন্য বড় চ্যালেঞ্জ (কোথাও কোথাও তো সন্ত্রাসবাদের হুমকিও আছে)। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকির কথাও তো ভুলে যাওয়া যায় না, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
এরপর আছে বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক হরেক রকম আইন। যদিও চীনা উদ্যোক্তাদের পক্ষে কোনো দেশে ঢোকার আগে এটা বোঝা সম্ভব নয়, সে দেশের আইন কেমন। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করা হলে একটি কোম্পানির কার্যক্রম ও বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ে যেতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে, চ্যালেঞ্জ অনেক জটিল হলেও তা দূর করার তরিকা কিন্তু বেশ সহজ-সরল। প্রথম ও প্রধান কথা হচ্ছে, দুর্নীতি পরিহার করতে হবে। কারণ, দুর্নীতি থাকলে শুধু ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ ব্যাহতই হবে না, ভবিষ্যতে চীনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগও হুমকির মুখে পড়বে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আর্থিক প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে এর ব্যয়, সুবিধা, বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাব যেমন বায়ুদূষণ, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের আশঙ্কা খতিয়ে দেখতে হবে।
এই মনোভঙ্গিটি আরও দৃঢ় করতে হলে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যাপারটাকে বাজারের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। অধিকাংশ বিনিয়োগের পরিধি ও অর্থায়নের পরিপ্রেক্ষিতে এটা খুবই কার্যকর হবে, ঠিক যেমন ঝুঁকি ভাগাভাগির প্রক্রিয়াও হিতকর প্রমাণিত হবে। এই অর্থায়নের ভিত্তি হচ্ছে সম্ভাব্য ক্যাশ ফ্লো, স্পনসরদের ব্যালান্স শিট নয়।
তা ছাড়া, বিনিয়োগকারীদের স্রেফ প্রকল্পের নির্মাণের দিকেই নজর দিলে চলবে না, তাদের আরও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের দিকে নজর দিতে হবে, যেমন মুনাফা নিশ্চিত করা, স্থানীয় লোকালয় ও পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলা প্রভৃতি। পরামর্শক, আইনজীবী, নিরীক্ষক, এনজিওসহ অন্যান্য সংস্থাকে এসব কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আরও কিছু ব্যবহারিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। যেমন বলা যায় নতুন ও অপরিচিত পরিবেশে কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতে পারে, ফলে কোনো দেশে যাওয়ার আগে তাঁরা আগেভাগেই সেখানকার স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আর ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগের নেতা হিসেবে চীনকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ হবে, প্রাদেশিক সরকারকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, আবার তাকে বাজারের গঠনমূলক ও ন্যায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে চীনকে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করতে হবে, যাতে সরকারের সব স্তরের কর্মী ও উদ্যোক্তারা বাইরে কাজ করার মৌলিক তথ্যগুলো জানতে পারে। আর এই উদ্যোগে হংকংকে যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে, কাজটা চীনকেই করতে হবে। কারণ অর্থায়ন, রসদ সরবরাহ, তথ্যপ্রাপ্তি, মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া, আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা—এসব কাজে হংকংয়ের অভিজ্ঞতা অনেক। আর কথাটা শেষে বললেও তা মোটেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, কথাটা হলো সংকট ব্যবস্থাপনা আরও সংহত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগ এবং বের হয়ে আসার কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
এই ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করাটা খুব সুখকর হবে না। কিন্তু সফল হওয়ার জন্য যা যা দরকার, চীনের কাছে তার সবই আছে। এখন কথা হচ্ছে, চীন যত দিন তা স্বচ্ছ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবহার করবে, তত দিন চীন ও তার প্রতিবেশীরা ব্যাপক লাভবান হবে।
∎StudyPress-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে--
- প্রথমে, www.studypress.org -এই অ্যাড্রেসে যান।
-- তারপর, (Sign up Now)-এ Click করুন।
-- এবার, আপনার (email ID), (Mobile number) এবং নিজের পছন্দের (password) লিখুন।
- এবার, (সাইন আপ) -এ ক্লিক করুন।
Or, স্টাডিপ্রেসে আপনার রেজিস্ট্রেশন করা আছে কিন্তু "পাসওয়ার্ড " ভুলে গেছেন। তাহলে আপনার "ই-মেইল" ও "মোবাইল নম্বর" studypress FB page -এ Message পাঠান। নতুন পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে।
∎আমাদের যোগাযোগ করতে পারবেন ৩ (তিন) ভাবে-
১। সরাসরি কথা বলুন-(০১৯১৭-৭৭৭০২১)
২। StudyPress ফেসবুক পেইজে ইনবক্স করুন অথবা,
৩। ওয়েবসাইটের অন-লাইন চ্যাট অপশনটি ব্যবহার করুন।
∎আমাদের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত 24/7
# কোর্সের ফি দিতে পারবেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন পেমেন্টে র মাধ্যমে অথবা বিকাশের মাধ্যমে। ০১৯১৭৭৭৭০২১/০১৭১৯৪৩৪৮৮৫ আমাদের বিকাশ নাম্বার।
bcs, bcs exam, bcs exam bangladesh, bcs exam results, bcs exam question, bcs exam quesitons, bcs exam time table 2017, bcs exam 2017, bcs exam papers, bcs exam preparation, bcs exam preparation books, bcs exam requirements, bcs exam fees, bcs exam results portal, bcs exam result 2017, bcs exam results release date, bcs exam bangladesh 2017, bcs exam bangladesh syllabus, bcs exam bangladesh preparation, bcs exam bangladesh sample quesitons, bcs exam bangladesh rules, bcs exam question and answer, bcs exam question and answer 2016, bcs exam question and answer 2015, bcs exam question and answer 2017, bank job bangladesh 2017, bank job bangladesh circular, bank job bd circular, bank job bd guide বিসিএস, বিসিএস প্রস্তুতি, বিসিএস সিলেবাস, বিসিএস প্রশ্ন, বিসিএস বই ডাউনলোড, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বই, বিসিএস কি, বিসিএস পরীক্ষা, বিসিএস পুলিশ ক্যাডার, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার, বিসিএস প্রস্তুতি বই ডাউনলোড, বিসিএস প্রস্তুতি ৩৮, বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন, বিসিএস প্রস্তুতির বই, বিসিএস প্রস্তুতি প্রশ্ন, বিসিএস প্রস্তুতি pdf, বিসিএস সিলেবাস ৩৭তম, বিসিএস সিলেবাস ৩৮তম, বিসিএস সিলেবাস ৩৬তম, বিসিএস সিলেবাস ৩৫তম, বিসিএস সিলেবাস pdf, বিসিএস সিলেবাস ডাউনলোড, বিসিএসের সিলেবাস, বিসিএস এর সিলেবাস, ৩৮তম বিসিএস এর সিলেবাস, ৩৮ তম বিসিএস ৩৮ তম বিসিএস প্রস্তুতি, ৩৮ তম বিসিএস সিলেবাস, ৩৮ তম বিসিএস কবে হতে পারে, ৩৮ তম বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি, ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষা, ৩৮তম বিসিএস প্রিলি, ব্যাংক জব প্রস্তুতি বই, ব্যাংক জব প্রশ্ন, ব্যাংক জব সার্কুলার ২০১৭, ব্যাংক জব ২০১৭, ব্যাংক জবের প্রস্তুতি, ব্যাংক জব কোচিং, ব্যাংক জব সিলেবাস, ব্যাংক জব সলুশন,