Studypress News
যে আটটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে পড়া সহজে মনে রাখতে পারবেন
02 Apr 2017
আমরা অনেকেই ছোটবেলায় প্রচুর কবিতা দোয়া দুরুদ এবং আল কোরআনের সূরা মূখস্ত করেছি। সেগুলোর অধিকাংশই এখনো আছে, কিন্তু এখন মনে হয় যেন আমাদের মস্তিষ্কের সেই ক্ষমতা আর নেই। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। সঠিক চর্চা এবং অধ্যাবসায় থাকলে যে কোন বয়সেই মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা সম্ভব।
১. ব্যায়াম করুন :
নিয়মিত ব্যায়াম স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, বিশেষ করে অ্যারোবিকস ব্যায়াম এক্ষেত্রে বেশি সহায়ক। তালে তালে নির্দিষ্টভাবে ব্যায়াম করতে হয় বলে তা মস্তিষ্কের চর্চারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পদ্ধতি মনে রাখতে মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ হয়, ফলে স্মরণশক্তি স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করা ছাড়াও পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ৫-১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার পূর্বে দশ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বেড়ে যায়।
স্মরনশক্তি বৃদ্ধিতে যোগব্যায়ামও সহায়তা করে। যোগব্যায়ামের কিছু আসনে মস্তিষ্ক পূর্ণ বিশ্রাম পায়। ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
২. পুষ্টিকর খাবার খান :
পুষ্টিকর খাবার স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে অনেকাংশে সাহায্য করে। মাতৃগর্ভে থাকার সময় শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে বিশেষ কিছু উপাদানের প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী মা যদি পুষ্টিকর খাবার খান তাহলে মস্তিষ্ক যথাযথভাবে গঠিত হয়। আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবার এ ব্যাপারে সাহায্য করে। সয়াবিন, দুধ, যকৃত, বাদাম, মাখন ইত্যাদিতে রয়েছে বিশেষ উপাদান কোলিন। সাইনাপসে তথ্য আদান -প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে কোলিন। খাবার থেকে এই উপাদান পাওয়া যায় বলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে পুষ্টিকর খাবারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
৩. মনোযোগ দিন :
কোনো বিষয় মনোযোগ দিয়ে শিখলে বিষয়টি মনে রাখা সহজ হয়। তাই কোনো পড়া বা কাজ শেখার সময় যথেষ্ট পরিমাণে মনোযোগ দিন। মনোযোগ একটি মানসিক প্রক্রিয়া। তাই এর চর্চা করলে সহজেই স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
মনোযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্যকারী কিছু কার্যক্রম রয়েছে, যেমন, পড়া শুরুর আগে কিছু আঁকাআঁকি করে নেওয়া, কিংবা উপরে উল্লেখিত কিছু সময়ের জন্যে হেঁটে নেওয়া, যা যা পড়া হবে তার একটি নিজস্ব সিলেবাস তৈরী করে নেওয়া। এছাড়াও উচিত পড়তে বসার আগে সকল দুঃচিন্তা এবং মাথার চাপ ঝেড়ে ফেলে পড়তে বসা। এটি সম্পূর্ণ মানসিক কার্যক্রম তবে মাথার দুঃচিন্তা কমিয়ে মাথায় অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে সহায়তা করার একটি কৌশল রয়েছে। কৌশলটি হলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ঠিক নাকের নিচে এবং উপরের ঠোঁটের ঠিক উপরে, অর্থাৎ নাক এবং উপরের ঠোঁটের মাঝামাঝি স্থানে ৩ সেকেন্ডের জন্যে চাপ দিয়ে রাখা, যার ফলে মাথার রক্ত সঞ্চালন আংশিক অথবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
৪. মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন :
মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করে বা জোর করে মনে করার চেষ্টা করার পরও যদি কিছু মনে না পড়ে তাহলে মস্তিষ্ককে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিন। অন্য কিছু ভাবুন বা ওই প্রসঙ্গ থেকে একেবারেই সরে আসুন। এতে কিছুক্ষণ পর প্রয়োজনীয় বিষয়টি নিজে থেকেই মনে পড়ে যাবে। কোনো কিছু স্মরণ করার জন্য এ পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টার ছোট ঘুম মস্তিস্ককে পুনরায় কার্যকরী করে তুলতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে দিনের সময়ভেদে এই ছোট ঘুম বা 'Power Nap' এর কার্যকারিতাতে কমবেশি হয়ে থাকে।
৫. শুনুন, পড়ুন এবং লিখুন :
কোনো কিছু শেখার সময় বিষয়টি অন্যের কাছ থেকে শুনলে মনে রাখা সহজ হয়। এ কারণেই ক্লাসে শিক্ষকের লেকচার শুনলে বিষয়টি সহজেই আত্মস্থ করা যায় এবং মনে রাখা যায়। তাই কোনো কিছু পড়ার সময় জোরে জোরে কয়েকবার পড়ুন, এতে মনে রাখা সহজ হবে। পড়ার পর তা লিখলে আমাদের মস্তিষ্ক তার একটি ছবি তৈরি করে ফেলে। ফলে বিষয়টি তুলনামূলক সহজে মনে পড়ে। তাই কোনো কিছু পড়ার পর তা লেখার অভ্যাস করুন।
৬. কালারিং বা মার্কার পেন ব্যবহার করে দাগিয়ে পড়া:
আমাদের মধ্যে অনেকেই মার্ক করে বা দাগিয়ে পড়ে। এটাও পড়া মনে রাখতে বেশ কার্যকর। মার্ক করার ফলে কোন শব্দ বা বাক্যের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর উপর ব্রেইনের ভিজ্যুয়ালিটি ইফেক্টও বেড়ে যায় যা পড়াকে মনে রাখতে সহায়তা করে।
৭. নিমনিক তৈরী করা:
আমাদের ব্রেইন আগোছালো জিনিস মনে রাখতে পারে না। তাই কোন কিছু ছক বা টেবিল আকারে সাজিয়ে নিলে কিংবা কবিতার ছন্দ বানিয়ে পড়লে তা সহজেই মনে রাখা যায়। পড়া মনে রাখার এই কৌশল কে নিমনিক (mnemonic) বলা হয়। যেমন আমরা রংধনুর সাত রং মনে রাখতে ছোটবেলায় পড়েছিলাম 'বে নি আ স হ ক লা' ।
৮. যা পড়েছি তা অন্যকে শেখানো:
পড়া মনে রাখার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই এ পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়। নিজে যা পড়েছি বা জেনেছি তা অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে মস্তিষ্কে আরো ভালোভাবে গেঁথে যায়। তাছাড়া অন্যকে শেখানোর ফলে নিজের দক্ষতা প্রকাশ পায় এবং পড়াটি ভালভাবে আয়ত্ত হয়েছে কিনা তাও বুঝা যায়।