Studypress News

বাংলাদেশ ও ভারত ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় সম্পন্ন

08 Jun 2015

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল ও দুই রুটে বাস চলাচলের বিষয়ে চারটি চুক্তিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। শনিবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসার পর বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি সই হয়। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সেখানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক স্থল সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে স্বাক্ষরিত চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ-প্রটোকল, উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, পণ্যের মান স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সহযোগিতা চুক্তি। এ ছাড়াও উভয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর (কোস্টগার্ড) মধ্যে সহযোগিতা, মানব পাচার প্রতিরোধ, জালনোট পাচার 

--

প্রতিরোধ, সমুদ্রভিত্তিক ব্লু-ইকোনমির ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, ২০০ কোটি ডলারের ঋণ বিষয়ক সমঝোতা, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক অর্থনীতির সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক সমঝোতা, আখাউড়ায় ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ লিজ বিষয়ে বিএসএনএল ও বিএসসিসিএলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি, বাংলাদেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের (এলআইসি) কার্যক্রম শুরু নিয়ে সম্মতিপত্র। ভেড়ামারা ও মংলায় ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিষয়ক সমঝোতা চুক্তিও সই হয়।এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কয়েকটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কলকাতা-আগরতলা বাস সার্ভিস ও ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস। এ ছাড়া খুলনা-মংলা রেলওয়ে লাইন এবং কুলাউড়া-শাহাবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বহাল, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রভবন, সারদা পুলিশ একাডেমিতে একটি মৈত্রী ভবন, ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের একটি পরীক্ষাগার এবং একটি বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হয়।বিকেলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা কক্ষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাসহ দুই দেশের কর্মকর্তারা এসব চুক্তিতে সই করেন।এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় করে বাংলাদেশ ও ভারত। যার মাধ্যমে দশকের পর দশক অবরুদ্ধ জীবন কাটানো অর্ধলক্ষাধিক মানুষের মুক্তির পথ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলল।শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা কক্ষে এ দলিল বিনিময়ের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশের পক্ষে এসব দলিল হস্তান্তর করেন। এ সময় ওই চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যপদ্ধতি সংবলিত পত্রও বিনিময় করা হয়।দলিল বিনিময়ের এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ এক টুইটে বলেছেন, 'এই মাহেন্দ্র্রক্ষণটিকে শুধু ঐতিহাসিক বললেও কম বলা হয়।'গত মে মাসে পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল নামে পরিচিতি পাওয়া সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার পর তাতে অনুসমর্থন জানায় ভারতের মন্ত্রিসভা, স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এ সমস্যার সমাধানের পরই বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন মোদি। উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের স্থল সীমান্ত নিয়ে এ সমস্যাটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়।এর আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হলেও তা আটকে ছিল ভারতের দিকে। কারণ ভূমি ছাড়তে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন।এর মধ্যে ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়।এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি।তবে কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও সচেষ্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে মানান তিনি।বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, এতে রয়েছে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে শুমারিতে এই তথ্য পাওয়া যায়।ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর; অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) ভারতের অংশ হয়ে যাবে। ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে।ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত যে প্রায় ১০ হাজার একর জমি বেশি হারাবে, সে জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না বলে প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে।এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে।প্রটোকলের আওতায় অপদখলীয় ভূমি নিয়ে বিরোধের অবসানও ঘটবে। এতে ভারত অপদখলীয় ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে। আর ২২৬৭ একর জমির ওপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।আর চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী ছিটমহলবাসী তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নিতে পারবেন।